পেশাদার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে লাইসেন্স আবেদনের সাথে ডোপ টেস্টের সনদও জমা দিতে হচ্ছে পেশাদার চালকদের। এক পরিপত্রের মাধ্যমে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে নতুন এ নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। এ নিয়ম কার্যকরের পর গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পেশাদার চালকদের ডোপ টেস্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবে এ ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। শুরুর দিকে দৈনিক ২৫ জন পেশাদার চালকের ডোপ টেস্ট করা হলেও পরবর্তীতে টেস্টের সংখ্যা দ্বিগুণ (৫০টি) করা হয়েছে। এখন দৈনিক ৫০টির বেশি ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।
হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি শুরুর পর গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সবমিলিয়ে ২ হাজার ১৪৫ জন পেশাদার চালকের ডোপ টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে প্যাথলজি ল্যাবে। এর মধ্যে ১০১ জন চালকের ডোপ টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত শতাধিক চালকের শরীরে মাদকের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। হিসেবে শতকরা ৫ জন চালকের শরীরে মাদক মিলেছে চট্টগ্রামে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ রিপোর্ট আসা চালকরা আর লাইসেন্স পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা। এ তথ্য নিশ্চিত করে বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) রায়হানা আক্তার ঊর্থী আজাদীকে বলেন, ডোপ টেস্টে যাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাদের লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা তাদের লাইসেন্স আটকে দিচ্ছি।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এক জনের ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। মূত্র সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরে মাদকের অস্তিত্ব আছে কি-না, তা নির্ণয় করা হয় এ পরীক্ষায়। নির্ধারিত একটি কিটের মাধ্যমে এ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। পেশাদার চালকদের ডোপ টেস্টের রেজাল্ট পাওয়ার পর ওই রিপোর্ট প্রথমে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে অনলাইনে পাঠাতে হয় বলে জানান হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া রাজু। পরে সংশ্লিষ্ট চালককে রিপোর্ট সরবরাহ করা হয়। সরকারিভাবে এই টেস্ট ফি ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা আছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, পেশাদার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করে গত ১২ জানুয়ারি পরিপত্র জারি করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের স্বাক্ষরে জারিকৃত পরিপত্রে ৩০ জানুয়ারি থেকে নতুন এ নিয়ম কার্যকরের কথা উল্লেখ করা হয়।
পরিপত্র অনুযায়ী, পেশাদার মোটরযান চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকালে প্রার্থীর আবেদনপত্রের সাথে সরকারি হাসপাতাল কর্তৃক সম্পাদিত ডোপ টেস্ট রিপোর্ট বা সনদ দাখিল করতে হবে। ডোপ টেস্ট রিপোর্ট/সনদ পজিটিভ হলে (মাদক সেবনের আলামত পাওয়া গেলে) বা এতে কোনও বিরুপ মন্তব্য থাকলে সেক্ষেত্রে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা যাবে না। ঢাকা মহানগরের ৬টি প্রতিষ্ঠান এবং সারা দেশে সকল পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে এ ডোপ টেস্ট করা যাবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় কেবল চমেক হাসপাতালেই এ টেস্ট করার সুযোগ রয়েছে পেশাদার চালকদের। এ কারণে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে তাদের। টেস্টের সিরিয়াল পেতেই ৬-৭ মাস সময় লাগছে।
বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জানুয়ারি নতুন নিয়ম কার্যকরের পর তারা (বিআরটিএ) ৩১ জানুয়ারি থেকে ডোপ টেস্টের জন্য চিঠি ইস্যু শুরু করেন। ওই সময় থেকে গত ৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার চালকের ডোপ টেস্টের জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এরইমধ্যে এ সংখ্যা আরো বেড়েছে। কিন্তু অপ্রতুল টেস্টের কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চালক এখনো পর্যন্ত ডোপ টেস্ট করাতে পারছেন না। অনেকেই এই টেস্টের জন্য আটকে আছেন। আর এখন পর্যন্ত শতাধিক চালক এই ডোপ টেস্টে পজিটিভ হিসেবে ‘ধরা’ পড়েছেন। তারা আর লাইসেন্স পাচ্ছেন না।