বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথিতযশা কথা সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শওকত ওসমান। একাধারে তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, রম্যরচনা, স্মৃতিকথা, অনুবাদ এবং শিশুতোষ গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে ঔপন্যাসিক হিসেবেই তাঁর পরিচয় মুখ্য। আজ তাঁর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী।
শওকত ওসমানের জন্ম ১৯১৭ সালের ২রা জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবলসিংহপুর গ্রামে। প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান। তবে শওকত ওসমান নামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ করেন শওকত। কর্মজীবনে গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ এবং ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ‘কৃষক’ পত্রিকায় সাংবাদিকতাও তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শওকত ওসমানের রচনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: উপন্যাস: ‘জননী’, ‘ক্রীতদাসের হাসি’, ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’, ‘দুই সৈনিক’, ‘নেকড়ে অরণ্য’; গল্পগ্রন্থ ‘জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প’, ‘ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘মনিব ও তাহার কুকর’; প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সংস্কৃতির চড়াই উৎরাই’, ‘আমলার মামলা’, ‘পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা’; শিশুতোষ গ্রন্থ ‘ক্ষুদে সোশালিস্ট’, ‘ওটেন সাহেবের বাংলো’, ‘পঞ্চসঙ্গী’; রম্য রচনা ‘নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত’ প্রভৃতি। ‘কালরাত্রি খণ্ডচিত্র’, ‘মুজিবনগর’, ‘সোদরের খোঁজে স্বদেশের সন্ধানে’, ‘মৌলবাদের আগুন নিয়ে খেলা’, ‘স্বজন সংগ্রামে’ ইত্যাদি তাঁর স্মৃতিকথামূলক রচনা। অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বাগদাদের কবি’, ‘টাইম মেশিন’, ‘স্পেনের ছোটগল্প’, ‘পাঁচটি কাহিনি’ (লিও টলস্টয়), ‘পাঁচটি নাটক’ (মলিয়ার), ইত্যাদি। শওকত ওসমানের রচনা মননশীলতা ও প্রগতি চেতনায় ঋদ্ধ।
বাংলার চিরায়ত সমাজের চালচিত্র, সমকালীন রাজনৈতিক পটভূমি, মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি তাঁর রচনার অনুষঙ্গ হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে শওকত ওসমান ছিলেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আন্দোলনের সমর্থক। দেশের যে-কোনো সংকটকালীন সময়ে তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার কণ্ঠ। শওকত ওসমান বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আকাদেমী সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৮ সালের ১৪ই মে তিনি প্রয়াত হন।