পাকিস্তানি আমলে রাস্তায় মাঝে মাঝে ল্যাংটা পাগল দেখতাম। দেখেছি ল্যাংটা ফকিরও। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ল্যাংটারা কোথায় যে উধাও হয়ে গেলো তা বুঝতে পারছি না। ধারণা করা যেতে পারে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ল্যাংটা পাগল ও ফকিররা খান সেনাদের বন্দুকের গুলিতে মারা গিয়েছিলো। কৈশোরে আমার অদম্য কৌতূহল ছিলো ল্যাংটা পাগলি দেখার। তবে কৈশোরে নয়, তরুণ বয়সে দেখলাম একটা ল্যাংটা তরুণী পাগলিকে রাস্তায় নেচে নেচে বোম্বে (মুম্বাই) ফ্লিমের গান গাইতে। মাঝে মাঝে খিলখিল করে হাসছে। দেখে মনে হলো পাগলিটা খুব সুখী। দেখলো আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে দেখে যাঃ যাঃ করে তাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলো। দেখলাম সে আর নাচছে না। লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। বুঝতে পারলাম আমি একজন যুবক বলেই এই যুবতী পাগলিটা লজ্জা পেয়েছে। লক্ষ্য করলাম তার হাতে একটা থালা। কেউ কেউ এক টাকা, পাঁচ টাকা ভিক্ষে দিচ্ছে। অনেকে আবার দিচ্ছে দশ টাকাও। পথচারীদের মধ্যে কেউ কেউ বলছে, পাগলিটা মেয়ে ফকির। আমি টাকা দিতে চাইলে নিলো না। বুঝতে পারলাম পাগলিটা অনেক দুঃখে পাগলি হয়েছে। সে আসলে একজন সুস্থ মানুষ।
একবার পত্রিকায় দেখেছিলাম ইউরোপে একটি ‘সীবিচ’ রয়েছে যেখানে মানুষ ল্যাংটা হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমার ইচ্ছে রয়েছে এই বীচে ল্যাংটা হয়ে ঘুরে বেড়াতে। সবাই অপরিচিত বলে লজ্জা পাবো না। কিন্তু লজ্জা পাবো তখনই যখন দেখবো আপনার মতো একজন অতি পরিচিত জন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সামনের ডিসি হিলে আপনি যদি ল্যাংটা হয়ে মর্নিংওয়াক করেন তবে প্রথমে আমরা আপনাকে ঢিল ছুুড়লেও পরে এই দেখাটা চোখ সওয়া হয়ে যাবে। তখন স্বচ্ছন্দে আপনার সাথে মর্নিংওয়াক করবো।
আপনি একদিন আমকে বললেন, আপনি ল্যাংটা হয়ে মর্নিংওয়াক করেন বলে জটিল ডায়বেটিস ব্যাধি হতে মুক্ত হয়েছেন। কথাটা আমি অনেককেই বললাম, কারণ ডিসি হিলে যারা মর্নিংওয়াক করতে আসেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ডায়াবেটিস আক্রান্ত। একদিন হয়তো দেখবো এই ডিসি হিলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি ‘ল্যাংটা হেলথ ক্লাব’। আমার ঠাকুরদা বাইরে বের হওয়ার সময় ধুতির নিচে ল্যাংটি পরতেন। আমি একদিন ঠাকুরমাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ল্যাংটি পরো না? তিনি হেসে বললেন, আমি তোমার ঠাকুরদার ল্যাংটি কাঁচতে যাচ্ছি, পরে বলবো।
আমাদের গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, কুকুর ল্যাংটা থাকলেও ল্যাংটা বলে মনে হয় না। আমরা মানুষ নামের প্রাণীটি পোশাক পরলেও মনে হয় ল্যাংটা আছি। ‘উলঙ্গ সত্য কথা’ (ল্যাংটা সত্য কথা) হলো হুঁশ আছে বলে মানুষ হলেও আসলে আমরা বেহুঁশ।
satyabarua48@gmail.com