জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি ও বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক পদে কর্মরত মো. শাহজাহান (৫৪) ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আকতারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মো. শাহজাহান কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার কাতালিয়া গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে। বর্তমানে স্ত্রীকে নিয়ে খুলশী থানাধীন লালখান বাজার হাইলেভেল রোডে বসবাস করছেন। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ বিষয়ে তিনি আজাদীকে বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এক লাখ ৭১ হাজার ৭৩৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য প্রদান, এক কোটি ৪৮ লাখ চার হাজার ৪১৩ টাকার সম্পদ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করে অবৈধভাবে ভোগ দখলে রাখার মতো অপরাধ করেছেন আসামিরা। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা, ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মামলার এজহারে বলা হয়, ২০১৭ সালে লোহাগাড়া থানার ওসি ছিলেন মো. শাহজাহান। তখন তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ দাখিল হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে যার সত্যতাও পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আকতারের বিরুদ্ধে পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির নির্দেশ দেয়া হলে ফেরদৌসী আকতার বরাবর আদেশী জারি করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। যেখানে তিনি ৩ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৪ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু যাচাই-বাছাই শেষে তার নামে সর্বমোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৪ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেছেন। খুলশী থানাধীন লালখান বাজারের হাইলেভেল রোড এলাকায় নির্মিত বাড়ি নির্মাণ ব্যয় বাবদ তিনি তা গোপন করেন।
ফেরদৌসী আকতার তার দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে পোল্ট্রি খামার এবং মৎস্য খামার থেকে ২০১৫-১৬ করবর্ষে ১০ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ করবর্ষে ৪৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৫১ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ কর বর্ষে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৫ টাকা, ২০১৯-২০ কর বর্ষে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫০ টাকাসহ মোট ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৫ টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু বর্ণিত ব্যবসা সম্পর্কিত ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া অন্য কোনো রেকর্ডপত্র যেমন- সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, মৎস্য এবং পোল্ট্রি খামারে মিটার সংযোগের শুরু থেকে যাবতীয় রেকর্ডপত্র এবং পরিবেশ ছাড়পত্র, খামারের লেনদেন সংক্রান্তে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, মালামাল ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্তে চালান-বিল ভাউচার সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ্য রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। তাই তার প্রদর্শিত ওই আয় গ্রহণযোগ্য নয়। ফেরদৌসী তার স্বামী ওসি মো. শাহজাহানের সহযোগিতায়, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ দখলে রেখে ভুয়া পোল্ট্রি ও মৎস্য ব্যবসার আয় দেখিয়ে ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৫ টাকা ভুয়া আয় প্রদর্শন করেছেন।
এজহারে আরো বলা হয়, আসামি ফেরদৌসী আকতার তার স্বামী শাহাজাহানের সহযোগিতায় ২ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭ টাকার স্থাবর ও ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩১ টাকার অস্থাবরসহ সর্বমোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সময়ে তিনি মোট ৬১ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৪ টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৫৩২ টাকা। ওই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ টাকা। সে অনুযায়ী ফেরদৌসী আকতার ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪১৩ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ দখলে রেখেছেন। যা তার স্বামী মো. শাহজাহান দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্জন করেন।