চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ৫৩নং পহরচাঁন্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে অপসারণ করার প্রচেষ্টাসহ অনিয়ম, দুর্নীতি, গাফেলতী, অবেহলা, শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টের নানা অভিযোগ উঠেছে একই বিদ্যালয়ের অপর দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের চারজন দাতা সদস্যসহ অভিভাবক ও এলাকাবাসীর ১৭ জনের সাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদান করা হয়েছে।
অভিযুক্ত দুই শিক্ষক হলেন পহরচাঁন্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবছার উদ্দিন এবং অপর সহকারী শিক্ষক আইয়াস মোঃ বাবর।
অভিযোগে বলা হয়, লোহাগাড়া উপজেলাধীন ৭নং পুটিবিলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে অবস্থিত পহরচাঁন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৮ সাল থেকে আবছার উদ্দিন দায়িত্বরত আছেন। উনার বসতবাড়ি পহরচাঁন্দা এলাকায় হইলেও তিনি বিদ্যালয় থেকে প্রায় ১৭ কিঃমিঃ দূরে আমিরাবাদ এলাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় অবস্থান করার ফলে প্রতিনিয়ত ঠিক সময়ে উপস্থিত না হয়ে ১-২ ঘন্টা বিলম্বে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন।
বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বিদ্যালয় থেকে ৫০০ গজ দূরে তাহার নিজস্ব অর্থায়নে গড়া তাকিয়া এগ্রো ফার্ম প্রজেক্টে চলে যাওয়া বা দেখাশুনায় প্রায় প্রতিদিন ছুটি দাবি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকেন।
প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরী করা ও তার অধিনে পরিচালিত প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পহরচাঁন্দা আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন পরিচালনা করায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিলম্বে উপস্থিতি ও সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারণে কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের সহিত প্রায় সময় বাক বিতন্ডায় লিপ্ত থাকেন।
কিন্তু উক্ত শিক্ষক স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সাহস পায় না। তার ইচ্ছা অনুযায়ী যখন তখন বিদ্যালয় ত্যাগ করা নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক কালে সরকার পরিবর্তনের সুযোগে লোভ-লালসার কমিটির লোকজন ও প্রধান শিক্ষককে বিনা অজুহাতে টিপসহি আদায় সহ নানান রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল।
তার এহেন বেআইনি হুমকি-ধমকিতে কমিটির লোকজন সহ প্রতিবাদী এলাকাবাসীগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
অপরপক্ষে আরেকজন শিক্ষক আইয়াস মোঃ বাবর বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে যোগদানের পর থেকে বোর্ড অফিসের বেশী টাকা নিয়ে স্কুল চলাকালীন সময়ে এলাকার জন্ম নিবন্ধন করার বাণিজ্য ব্যবস্থা করে। দুই শিফট স্কুল চলাকালে মাঝখানে ব্রেক টাইমে স্কুলের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ায় জনপ্রতি ৫০০/- টাকা নিয়ে আরও অন্যান্য অনিয়ম, দুর্নীতি পরিবেশ নস্ট করছে।
দুইজন শিক্ষককে বিভিন্ন অনিয়ম, অন্যায়, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে না পেরে স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে প্যারা শিক্ষক রাখার কথা বলে যা সরকারি নিয়ম ও আইন বর্হিভূত। এসব কারণে বিবাদীরা কিছু সংখ্যক লোভ-লালসার লোক সৃজন করিয়া প্রধান শিক্ষক অপসারণের ভিত্তিহীন দাবী উত্থাপন করে।
কিন্তু আমরা এলাকাবাসী, অভিভাবকগণ, দাতা গোষ্ঠী এবং সাবেক কমিটি পূর্বের মত পরিবেশ ও শিক্ষার মান রক্ষায় দীর্ঘদিনের সততা, অভিজ্ঞ শিক্ষক জনাব মহিউদ্দিন স্যারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে বহাল রাখতে চাই এবং ষড়যন্ত্রকারীদের কর্তৃক তার অপসারণের প্রস্তাব প্রত্যাহার দাবী জানাচ্ছি।
এমনকি বিবাদীরা দাতা গোষ্ঠী ও এলাকাবাসীর সুপরামর্শ কখনই গ্রাহ্য করে না। তাই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ পড়ালেখার কথা সুবিবেচনায় অত্র দরখাস্তখানা গ্রহণ করত উপরোল্লিখিত এবারতের বর্ণনাদি মহোদয়ের মাধ্যমে প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করিয়া অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এখনই যথোচিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ না করিলে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় অপূরনীয় ক্ষতি হবে। যাহা অর্থের দ্বারা পূরণ করা সম্ভাবপর নয়। তাই নিরুপায় হয়ে মহোদয়ের শীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হলাম।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে ৮ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করে আসা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ২০১৮ সাল থেকে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে, সর্বশেষ গত ৫ই আগষ্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর অপর ২ শিক্ষক আবছার উদ্দিন ও আইয়াস মোঃ বাবর সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব আইয়াস মোঃ বাবরকে বুঝিয়ে দিতে বলে, দায়িত্ব হস্তান্তর পত্রে জোরপূর্বক সাক্ষর আদায় করে নেয়, অন্যথায় জোরপূর্বক বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হবে এবং অসম্মান করা হবে হবে হুমকি প্রদান করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পহরচাঁন্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবছার উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার উপর আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির লোকজন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন তাদের দুর্নীতি বাইরে বের হয়ে যাওয়ার ভয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে, বরং তাঁরা সরকারি বরাদ্দের স্লিপের টাকা সহ নানান ফান্ড এর টাকার হিসাব দিতে না পারার ভয় থেকেই এসব কাজ করছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পহরচাঁন্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষক আইয়াস মোঃ বাবর বলেন, আমার উপর আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন তাদের দুর্নীতি লুকাতে এসব মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। ইতিপূর্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন তাঁর দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন কেউ তাঁকে কোন ধরনের জোর করেনি, বিগত সময়ে দাতা সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্যারা শিক্ষক রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা করে আদায় করেছেন এবং আমাদের সাথে কোন ধরনের পরামর্শ ও আলোচনা ছাড়াই সকল ধরনের কাজকর্ম পরিচালনা করে টাকা-পয়সা তছরুপ করেছেন সেসবের হিসাব দেওয়ার ভয়ে তাঁরা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর দৈনিক আজাদীকে বলেন, এই সংক্রান্ত একটা অভিযোগ পেয়েছি আমরা তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।