নিতান্ত ক্রুদ্ধ ক্ষুব্ধতায় একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকে দেখলাম যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ও প্রত্যক্ষ সাহায্যে শুধু একদিনে ইসরাইলের অব্যর্থ লক্ষ্য ভেদী মার্কিন যুদ্ধবিমানের হামলায় পাঁচশত শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ সাধারণ মানুষের রক্তে ঐতিহাসিক বৈরুতের রাজপথে রক্তের প্লাবন বইছে। প্রতিকারহীন শক্তের নির্মম বর্বরতার নিষ্ঠুর পাশবিকতার ছোবলে আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে গাজা ও লেবানন। ঠিক একই সময়ে নিউইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট “জো বাইডেন” তাঁর বিদায়ী ভাষণে জাতিসংঘের বার্ষিক বিশ্ব সভায় গণতন্ত্র ও বিশ্ব মানবতার পক্ষে কথা বলেছেন, শান্তির ললিত বাণীর লালিত্যে মুখরিত করে তুলেছেন বিশ্ব সভার কোলাহল মুখর খ্যাতির প্রাঙ্গণ। আমাদের মত ছোট্ট দেশের সরকার প্রধানকে সাক্ষাতের কথিত “বিরল সুযোগ” প্রদান করেছেন মর্মে আমাদের গণতন্ত্র প্রিয় মিডিয়ার শীৎকারের মধ্যে আজ দেখা গেল বাইডেন সাহেব বুকে টেনে জড়িয়ে ধরেছেন আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে। এ পটভূমিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব রাজনীতিতে ১৯৪৫ থেকে গত প্রায় ৮০ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা অবশ্যই প্রাসঙ্গিক।
প্রায় এক বছর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভুখন্ডে হামাসের হত্যা ও অপহরণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল গাজা আক্রমণ করে এক বছরে গাজার মত ছোট্ট এক চিলতে জায়গা বলতে গেলে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করে যার অধিকাংশই অসহায় শিশু ও নারী। বাকীরা এখন ঠাসাঠাসি করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন– মিসর সীমান্তে। যাদের আশ্রয় দিচ্ছেনা পড়শী ধনী আরব দুনিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার আড়াই বছর পরে এসেও লেবাননের বা গাজার মত কোন নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়নি বরং সে আক্রমণ রাশিয়াকে করতে হয়েছে চুক্তি লঙ্ঘন করে ন্যাটো যুদ্ধ জোটের পূর্বমূখী সম্প্রসারণ এবং মার্কিন অনুগত জেলেনস্কি সরকারের মাধ্যমে হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত রুশ–ইউক্রেন সীমান্তে ঘাঁটি ও নজরদারি করার চক্রান্ত রুখে দিতে তথা নিছক আত্মরক্ষার প্রয়োজনে। এ কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শুধু নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়নি বরং পশ্চিমা ব্যাংকগুলোতে রাশিয়ার আমানত হিসাবে গচ্ছিত শত শত বিলিয়ন ডলার আটক করে আন্তর্জাতিক নিয়ম বহির্ভূতভাবে সে অর্থ ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির মূল্য হিসাবে পরিশোধের ব্যবস্থা হচ্ছে। এই নিছক দস্যুবৃত্তি কথিত গণতান্ত্রিক বিশ্ব সমর্থন করে যাচ্ছে নির্বিবাদে।
বস্তুত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধোত্তর সময়ে বিশ্ব রাজনীতিতে ইঙ্গ ফরাসী আধিপত্যকে ছাপিয়ে একক নেতৃত্বে চলে আসে মূলত বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিশাল ভুখন্ডের মালিক হবার ও তার দোর্দন্ড আর্থিক প্রতিপত্তির কারণে। অন্যদিকে যুুদ্ধ বিদ্ধস্ত ইউরোপকে পুনর্গঠনের মহাপরিকল্পনা বা বিখ্যাত মার্শাল প্লান তাকে পশ্চিম ইউরোপের কাছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসাবে গড়ে উঠতে হতে সাহায্য করে, সুবিপুল আর্থিক ও সামরিক সক্ষমতার কারণে। কিন্তু একই শত্রু বা ফ্যাসিস্ট হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েও সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত বলয়ের দেশগুলোকে সাহায্য করা দূরে থাক সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাধ্যমে এসব দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এক সর্বব্যাপী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যত হয়। ফলে ১৯৪৫–৯০ কালপর্বে দুই আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদ আর সমাজতন্ত্রের অনুসারী মূলত পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে শুরু হয় প্রতিযোগিতা অর্থনীতিতে ও সামরিক শক্তির বিন্যাসে। ১৯৪৯ সালে মার্কিন নেতৃত্বে ইউরোপে প্রথম পুঁজিবাদী যুদ্ধ জোট “ন্যাটো” গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে পোল্যান্ড এর রাজধানী ওয়ারশতে গঠিত হয় পাল্টা “ওয়ারশ সমাজতান্ত্রিক যুদ্ধ জোট”। অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে গঠিত হয় পুঁজিবাদী অর্থনীতি অনুসারীদের অর্থনৈতিক জোট ইউরোপীয়ন ইকনমিক কমিউনিটি বা “ইইসি”, অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপের সমাজ তান্ত্রিক দেশগুলো গড়ে তোলে “কমেকন” বা কাউন্সিল অব মিউচুয়াল ইকনমিক এসিসস্টেন্স”। এই দুই শিবিরের প্রতিযোগিতা শুধু ইউরোপ নয় ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে, দর্শনে, এমনকি ধর্ম বিশ্বাস থেকে সাহিত্য–সংস্কৃতির অঙ্গনে। পৃথিবীতে আর্ভিভুত হয় দুই পরাশক্তি– সোভিয়েত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র– তৈরি হয় বিশ্বব্যাপী শক্তির এক ভারসাম্য। ইতোমধ্যে ইউরোপের বাইরে কমিউনিস্টরা চীন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ড থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে কিউবায় ক্ষমতা দখল করে পুজিঁবাদী শাসনের বিকল্প হিসাবে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূখন্ডে সমাজ তান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে ঝুঁকে পড়ে। ফলে শুরু হয় দুই শিবিরের মধ্যে উত্তেজনাকর ঠান্ডা যুদ্ধ। অন্যদিকে সাবেক উপনিবেশ তথা সদ্য স্বাধীন তৃতীয় দুনিয়া খ্যাত অনুন্নত দেশগুলি মানুষের মুক্তির আকাঙ্খাজাত পরিবর্তনের রাস্তায় হাঁটবে নাকি সাবেক উপনিবেশের শোষনমূলক সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর রাজনৈতিক অর্থনীতির পথে হাঁটবে তা ঠিক করতে দ্বিধায় পড়ে যায়। ঠিক এই সময়ে সোভিয়েত রাশিয়া সদ্য স্বাধীন অনুন্নত দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের ঋণ সাহায্য নির্ভর চক্রান্তমূলক আর্থ রাজনৈতিক পদক্ষেপের বিপরীতে কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সহ আত্ম নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে সীমিত ক্ষমতা নিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। মিশর, সিরিয়া, ভারত, চীন প্রভৃতি দেশে এখনো সোভিয়েত নির্মিত ভারী শিল্প অবকাঠামো তাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসাবে কাজ করছে। এমনকি আমাদের দেশে পতেঙ্গায় সোভিয়েত নির্মিত জি. ই.এম প্ল্যান্ট, ঘোড়াশাল তাপ–বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ এরকম অবকাঠামোর উদাহরণ আছে। বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটি জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী শক্তিকে প্রত্যক্ষ সাহায্য– সহযোগিতা করে সোভিয়েত রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক দস্যুবৃত্তিক প্রভাবকে রুখে দেয় ১৯৬০, ৭০ ও ৮০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত তো বটেই আভ্যন্তরীণ নানা সংকটে পরবর্তীতে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় পৃথিবীকে সার্বিক এক রাজনৈতিক আর্থিক ও মৌলবাদী সাংস্কৃতিক সংকটে নিপতিত করে। এ এক ভিন্ন প্রেক্ষিত, ভিন্ন আলোচনা।
১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে পাক সেনা ও এদেশীয় দালালদের পৈশাচিক ও নজিরবিহীন গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে মার্কিন চীন বিরোধিতাকে পরাস্ত করতে সোভিয়েত রাশিয়া যে সাহায্য করে তা এদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসেরই অংশ। শুধু তাই নয় যুদ্ধে বিধ্বস্ত জাহাজ ও পাকিস্তানিদের মাইন বিছিয়ে রাখার ফলে অচল চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল করতে সরকারের জরুরি অনুরোধে রাশিয়ার নৌবাহিনীর ঝুঁকিপূর্ণ স্যালভেজ অপারেশন চট্টগ্রাম বন্দরকে পুনরায় চালু করতে সাহায্য করে নিশ্চিত বিপর্যয়ের মুখ থেকে সদ্যমুক্ত বাংলাদেশকে রক্ষা করেছিল যা অন্য কোন দেশ করতে রাজি হয়নি এবং সে অপারেশন করতে গিয়ে নিহত একজন রুশ নৌ–সেনার কবর এখনো অযত্ন অবহেলায় বন্দর এলাকায় পড়ে আছে–আমাদের কুশিক্ষা, বিস্মৃতি ও অকৃতজ্ঞ চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের কলংকিত স্মারক হিসাবে।
আমাদের নেতৃত্বের সেই অমার্জনীয় বিস্মৃতি ও অকৃতজ্ঞ চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের সংস্কৃতি কিছুদিনের মধ্যেই ডেকে আনে রাষ্ট্রিক ও ভাবাদর্শিক বিপর্যয়। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস অহর্নিশ পরিশ্রম করে, দেশী বিদেশী চক্রান্ত নিজ দূরদর্শী চিন্তা, ধৈর্য ও কাজের মাধ্যমে যে নেতা ব্যর্থ করে দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে মূল ভূমিকা পালন করেন, সমসাময়িক রাজনীতির সবচেয়ে প্রাজ্ঞ নেতা প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনকে শুধু ঈর্ষাবশত অপমান করা শুরু হল সেই ১৯৭২ সাল থেকে, ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হল পাকিস্তানি আর্থ–রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ মুক্ত দেশ গড়ার কঠিনতর সংগ্রামের জন্য তাঁর প্রণীত রূপরেখা, তাঁর অভিজ্ঞতা প্রসূত দৃঢ় মার্কিন বিরোধিতার মুখে আত্মনির্ভর দেশ গড়ার পথ রেখা, শুধু তাই নয় তাঁকে শেষ পর্যন্ত ১৯৭৪ সালে অপমানজনকভাবে মন্ত্রীসভা থেকে বের করে দেয়া হল। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ভাষায় “এ শাস্তি তাঁর প্রাপ্য ছিল না” অথচ পাশে রেখে দেয়া হল মার্কিন এজেন্ট মোস্তাককে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে একবারের জন্যও উচ্চারিত হল না সশস্ত্র সংগ্রামের মূল নেতা ও রূপকার তাজউদ্দিনের নাম– সেই ১৯৭৫ পূর্ববর্তী অবহেলার আবহ থেকেই, উপেক্ষিত হলেন প্রবাসী সরকারের সর্বদলীয় জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জাতীয় নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ১৯৭১ সাল থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিরোধী পাক মার্কিন ও তাদের এদেশীয় দোসরদের চক্রান্ত একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি, ১৯৭৪ এ নগদে কেনা খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের আগমন মাঝপথে বন্ধ করে মার্কিন সৃষ্ট দূর্ভিক্ষে লক্ষ মানুষের মৃত্যু, ১৯৭৫ এর হত্যাকাণ্ড সোৎসাহ সমর্থন, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসনকে প্রত্যক্ষ সমর্থন করার সময় একবারও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য মার্কিন সরকারকে সামান্যতম উদ্বেগ প্রকাশ করতে কেউ শুনেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ঘাতকের ভূমিকায় দেখেছি লেবাননে, সিরিয়ায়, ইরাকে, লিবিয়ায়, মিশরে, আফগানিস্তানে এবং আজকের পাকিস্তানে। বিনা বিচারে নির্মমভাবে হত্যা করা হল সাদ্দাম ও গাদ্দাফিকে। আমাদের দেশে “গণতন্ত্রের” জন্য প্রাণপাত করা অন্তর্বর্তী ও নিয়মিত সরকারগুলোর এমনকি কথিত বামদের এ নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই বরং ডেভিড বোষ্টার এর আজকের উত্তরসুরী “ডোনাল্ড–লু” মায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে সহাস্য আলিঙ্গন ও করমর্দনকে আমরা বিজ্ঞাপিত করছি চরম সাফল্যের স্মারক হিসাবে। শুধু দেশকে নয় কিছু সংবাদপত্রের সরকার প্রধানের ব্যক্তিগত ক্যারিশমা ও সক্ষমতাকে মানুষের কাছে তুলে ধরার এ প্রবণতা ও অতি উৎসাহ একদিন প্রকৃত গণতন্ত্র বিশ্বাসীদের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। এই বাইডেনকে পূর্বাহ্নে আমরা দেখেছি নিজ বাসভবনে মোদির সাথে আন্তরিক আলাপচারিতায় মগ্ন থাকতে, ডোনাল্ড–লুকে দেখেছি দিল্লী থেকে ঢাকা এসে আবার দিল্লী ছুটে যেতে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটি স্থানীয় যুদ্ধের ইন্ধন দাতা, প্রত্যেকটি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতাকারী, দেশে দেশে ধর্মান্ধতাকে নবরূপে জাগিয়ে তুলে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা, প্রকৃত গণতন্ত্রের সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করা, নিজ স্বার্থ বিরোধী হলে গণরায় না মানা এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনো কোন দেশের প্রকৃত শুভাকাঙ্খী হতে পারে না। এমনকি আপাত বন্ধুদের সে ছুড়ে দেয় যেকোন অজুহাতে। আমাদের দেশে আজ ব্যক্তির ধর্ম পরিচয়ের প্রাধান্যের পটভূমিতে, মানবিক পরিচয় ও বোধের আকালে, মৌলবাদী আস্ফালনের ও ক্ষমতাসীনদের মার্কিন প্রীতির আবহে মনে পড়ে মানবিক বোধ ও বিশ্বাসের শেষ আশ্রয় রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবনের কোন এক জন্মদিনের উচ্চারণ : “শুনি তাই আজি / মানুষ জন্তুর হুংকার দিকে দিকে উঠে বাজি / তবু যেন হেসে যাই যেমন হেসেছি বারে বারে / পন্ডিতের মূঢ়তায়, ধনীর দৈন্যের অত্যাচারে/ সজ্জিতের রূপের বিদ্রুপে।”
লেখক : শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট।