রিজার্ভের টানা পতনে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধে অনিশ্চয়তা, রেমিট্যান্স প্রবাহে ঘাটতি, মূল্যস্ফীতি আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠার মধ্যে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন দেখল বিনিয়োগকারীরা। ফ্লোর প্রাইসের বেশি দর থাকা কোম্পানির শেয়ারগুলো ফ্লোরমুখী হওয়ার ইঙ্গিতের মধ্যে নতুন করে বিনিয়োগ করতে চাইছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে লেনদেন কমে নেমেছে সাত সপ্তাহের সর্বনিম্ন অবস্থানে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলোর শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে বেশি, তার ১৩৫টিই দর হারিয়েছে, বেড়েছে কেবল ১২টির। ডিএসইতে দিনভর হাতবদল হয়েছে কেবল ৩৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার। এই লেনদেন গত ১৬ আগস্টের পর সর্বনিম্ন। সেদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫১ কোটি ৫৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই লেনদেনের ৪০ শতাংশই হয়েছে ৪০টি কোম্পানিতে। দুইশরও বেশি কোম্পানির কার্যত কোনো ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। খবর বিডিনিউজের।
সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার মধ্যেও ২৪ পয়েন্টের দরপতনে ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্সকে নামিয়ে এনেছে ৬ হাজার ২৩৭ পয়েন্টে। লেনদেনের মতোই সূচকের এই অবস্থানও ১৬ আগস্টের পর সর্বনিম্ন। সেদিন ডিএসইর সার্বিক সূচক ছিল ৬ হাজার ২২০ পয়েন্টে।
আতঙ্কের নানা কারণ : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সহসভাপতি আহমেদ রশিদ লালী এই দরপতনের জন্য একটি জাতীয় দৈনিকের একটি লেখাকে দায়ী করেছেন। তার দৃষ্টিতে ‘বাংলাদেশকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের পদক্ষেপ আসছে’, এমন লেখা ভাইরাল হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।
দ্বিতীয়ত আমাদের অর্থনীতির যেসব সূচক আছে, যেমন রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, সেগুলোর নিম্নমুখী। এর কারণেও আতঙ্ক বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, ‘একটু দেখি, কী হয়’।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে আড়াইশটির মতো কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে না পারার কারণে লেনদেন আটকে যাওয়াও লেনদেন খরার কারণ বলে মনে করেন তিনি।
লালী বলেন, বাজারের মধ্যে ১৫০–৬০টা ইনস্ট্রুমেন্টের লেনদেন হচ্ছে। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ব্যক্তি খাতের বড় বিনিয়োগকারীদের ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। তারা বিক্রিও করতে পারছে না, না পারছে সুইচিং করতে। এসব কারণে বাজারে আস্থার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। কারণে বিনিয়োগকারীরা বসে আছে। নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে গতি ফেরার আশাও দেখছেন না তিনি।
ধাক্কা সবচেয়ে বেশি বীমা খাতে : মন্দা পুঁজিবাজারেও গত মাসে সাধারণ বীমা কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে লাফাচ্ছিল। অন্যান্য খাতের দরপতনের মধ্যেও এসব কোম্পানির শেয়ারদর টানা বেড়ে চলেছিল। লেনদেনেও সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল খাতটি। লেনদেনের দিক দিয়ে এদিনও সবার উপরে সাধারণ বীমা। তবে ৪২টি কোম্পানির মধ্যে ৪০টিই দর হারিয়েছে। একটি আগের দিনের দরে এবং একটি দর বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে। দরপতনের হারেও অন্য খাতকে ছাড়িয়ে গেছে সাধারণ বীমা। সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির মধ্যে আটটিই ছিল এই খাতের। এই ঝড়ের মধ্যেও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ১০ পয়সা বেড়েছে, ফ্লোর প্রাইসে আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের একটি শেয়ার। এই দরপতনের মধ্যেও লেনদেনের প্রায় এক চতুর্থাংশ ছিল সাধারণ বীমা খাতের অবদান। হাতবদল হয়েছে ৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
জীবন বীমা খাতের চিত্রটিও আলাদা কিছু নয়। লেনদেনে এই খাতের অংশগ্রহণ খুব বেশি ছিল না। দিনভর কেবল ১০ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এই খাতের ১২ কোম্পানিতে, যা মোট লেনদেনের ৩.১৯ শতাংশ মাত্র। তিনটি কোম্পানির লেনদেনই হয়নি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে দুর্বল কোম্পানি : ঢালাও দরপতনের দিনটিতে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে ওষুধ খাতের লোকসানি কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মা। লোকসানের কারণে টানা তিন বছর লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানি গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য এখনও লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে মার্চে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ার প্রতি ১৯ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে কোম্পানিটি।