লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ এখনো উদ্ধার হয়নি, উদ্বেগ

লোহাগাড়া থানা

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়া থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের বড় একটি অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের ব্যবহৃত বিপুল সংখ্যক অস্ত্র লুটের ঘটনায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহৃত হলে ভোট প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখতে প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন এলাকার সচেতন মহল।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার পতনের পর লোহাগাড়া থানায় দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় তারা থানার পাশাপাশি চুনতি পুলিশ ফাঁড়ির অস্ত্রাগার থেকে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। অস্ত্র ছাড়াও নগদ অর্থ, জব্দ করা যানবাহন ও গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া প্রায় ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে পিস্তল (টরাস) ৭টি, পিস্তল (সিজেট) ২টি, পিস্তল (চায়না) ৫টি, শর্টগান ১২টি, গ্যাসগান ৩টি, এসএমজি (চায়না) ১টি এবং রাইফেল (চায়না) ১টি। এর মধ্যে একটি টরাস পিস্তল ও একটি গ্যাসগান উদ্ধার করা হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের ৩ মার্চ রাতে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় মাইকে ‘ডাকাত এসেছে’ ঘোষণা দিয়ে নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক নামে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার সময় নিহত নেজাম উদ্দিনের মরদেহের পাশ থেকে একটি টরাস পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অস্ত্রটি পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৯ মার্চ দিনগত মধ্যরাতে সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা এলাকা থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন ও ইসহাককে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি দল। পরদিন তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানার কাঠগড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবদুল গণি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। ওই বাসা থেকে লোহাগাড়া থানা থেকে লুট হওয়া একটি টরাস পিস্তল ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া, গত ২১ এপ্রিল চুনতি ইউনিয়নের ডেপুটি বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে থানা থেকে লুট হওয়া টরাস পিস্তল বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. বাবুল ওরফে ডাকাত বাবুল (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি একই ইউনিয়নের বনপুকুর নলবনিয়া এলাকার বাসিন্দা।

অন্যদিকে, গত ৩০ এপ্রিল উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কলাউজান তেলিপাড়া এলাকায় নাজির হোসেনের বসতভিটা থেকে লোহাগাড়া থানা থেকে লুট হওয়া একটি গ্যাসগান ও ১৭টি টিয়ারশেল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এলাকার সচেতন মহলের মতে, লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ এখনো উদ্ধার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ অবৈধভাবে ব্যবহারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে নির্বাচনকেন্দ্রিক সময়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে তারা মনে করেন। পাশাপাশি সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকায় নজরদারি জোরদারেরও দাবি জানান তারা।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লোহাগাড়া থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার না হওয়া প্রশাসনিক ব্যর্থতারই প্রতিফলন। তার মতে, নির্বাচনের আগে এসব অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহৃত হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

চট্টগ্রাম১৫ আসনের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ আব্দুল মাবুদ বলেন, নির্বাচনের আগে থানা থেকে লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি তিনি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তার মতে, এখনো এসব অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

এ বিষয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, থানা থেকে লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সচেতন মহলের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লুট হওয়া অস্ত্র বা অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজয় দিয়ে বিপিএল শুরু করল চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট