লীলা নাগ(১৯০০–১৯৭০)। বাঙালি সাংবাদিক, জনহিতৈষী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ছিলেন। লীলা নাগ ১৯০০ সালের ২১ অক্টোবর আসামর গোয়ালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২১ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক লাভ করেন। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী।
তখনকার পরিবেশে সহশিক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে লীলা রায়ের মেধা ও আকাঙ্ক্ষা বিচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চান্সেলর ড. হার্টস তাকে পড়ার বিশেষ অনুমতি প্রদান করেন। বাঙালি নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে তিনি বিশেষ ভুমিকা পালন করেছেন। তিনি ঢাকার আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল এবং শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (তৎকালীন নারীশিক্ষা মন্দির) প্রতিষ্ঠা করেন। বিয়ের পর তার নাম হয় শ্রীমতি লীলাবতী রায়। ভারত বিভাগের পর লীলা নাগ কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯২৮ সালে লীলা নাগ দীপালি সংঘের সাথে সম্পৃক্ত হন। দীপালি সংঘ ছাড়াও তিনি যুক্ত ছিলেন অনিল রায়ের শ্রীসংঘের সাথে। ১৯৩০ সালে বাংলার সব বিপ্লবী দলের নেতৃস্থানীয়দের ইংরেজ সরকার একযোগে গ্রেপ্তার শুরু করলে অনিল রায় ও তাঁর সহকর্মীরাও গ্রেপ্তার হন। তখন শ্রীসংঘের সর্বময় নেতৃত্বের দায়িত্ব লীলা নাগের কাঁধে বর্তায়। শ্রীসংঘের সদস্যরা সশস্ত্র বিপ্লব পরিচালনা করার জন্য অস্ত্রসংগ্রহ ও বোমা তৈরী করেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল মামলার জন্য লীলা নাগ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ইন্দুমতি সিংহ কে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করে দেন। সূর্যসেনের পরামর্শে প্রথম নারী বিপ্লবী শহীদ প্রীতিলতা দীপালি সংঘের সদস্য হয়ে বিপ্লবী জীবনের পাঠ নিয়েছিলেন লীলা নাগের কাছে। ১৯৩১ সালের এপ্রিলে বি.ভির সদস্যদের গুলিতে পরপর ৩ জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং আলিপুরের জেলা জজ গার্লিক ও কুমিল্লার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সর নিহত হন। ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সের হত্যাকান্ডের সাথে দু’জন তরুণী জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর লীলা নাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। লীলা নাগ ভারতবর্ষে বিনা বিচারে আটক প্রথম নারী রাজবন্দী। ১৯৩৭ এর অক্টোবরে লীলা নাগ কারামুক্ত হন। লীলা রায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন। এজন্য কয়েকবার তাঁকে কারা বরণ করতে হয়। তিনি নারী সমাজে মুখপাত্র হিসেবে “জয়শ্রী” নামে একটি পত্রিকা বের করেন। ১৯৭০ সালের ১১ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।