মার্কেট খোলার খবরটা পেয়েই ছুটে এসেছে এখানে। সুমার জন্যে টুকটুকে একটা লালফ্রক কিনতে। হকার্স মার্কেটের চারদিকে তালা। দাড়োয়ান চাচা বললো, ঈদের আগে খুলবে না।
করোনার মহামারীতে দেড়মাস থেকে কোন কাজ নেই। বাজারে মুটের কাজ করে কিছু টাকা জমিয়েছে। গতবছর বায়না ধরেছিল। এবছরও কী সুমার মুখে হাসি ফোটাতে পারবে না শফিক!
সুমার জন্মের পর বাবা উধাও। মা অন্য কাউকে নিয়ে সংসার পাতার কথা শুনেছে। বুড়োদাদির কোলেপিঠে বড় হচ্ছে দু’ভাইবোন। দাদির ভিক্ষার চাল আর শফিকের বাজারের কুড়িয়ে আনা উচ্ছিষ্টের লতাপাতা সবজির সংসার ওদের। বাতের ব্যথায় ক’দিন বেরুতেই পারেনি দাদি। কাউন্সিলরের ত্রাণ না পেলে না খেয়েই থাকতে হতো।
রাস্তায় বাস টেম্পু নেই। গ্রীষ্মের প্রচন্ডরোদ মাথায় নিয়ে আসা যাওয়া তিনকিলো পথ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে। হাউজিং পেরিয়ে পাহাড়ের ঢালে ওদের বস্তি। পা-টাও যেন আর চলছে না। ধপ্ করে বসে পড়ে সুমনদের দালানের প্রাচীর ঘেঁষে। কেয়ারটেকার তাড়া দেয় ওঠে যেতে। কিছুতেই পারছে না। ছেলেটা পানি খেতে চাইছে।
সুমন জানালা দিয়ে দেখছিল ছেলেটিকে। একগ্লাস পানি নিয়ে নিচে নেমে আসে। কেয়ারটেকার আঙ্কেলকে পানি দিতে বলে।
আঙ্কেল বললেন- ওর তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
ওর ঠিকানা জেনে নেন। করোনা সন্দেহে আঙ্কেল দূরে সরে যায়। সুমন ভড়কে যায়। ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দেয়। টহল পুলিশ ছেলেটিকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ছেলেটি বলে-
-আমি চোর না, বোনের জন্যে লালফ্রক কিনতে গেছিলাম। এই টাকাটা বোনরে দিয়া কইও আমারে পুলিশ নিয়া গেছে।
পরদিন পুলিশ এসে কেয়ারটেকার আঙ্কেলকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলে। সুমনদেরকেও বাইরে যেতে নিষেধ করে নমুনা নিয়ে যায়। শফিকের করোনা ধরা পড়েছে।
ঈদের দু’দিন বাকি। কেয়ারটেকার আর সুমনদের করোনা টেষ্ট নেগেটিভ এসেছে। সুমন এ ক’দিন মুহূর্তের জন্যেও ভুলতে পারে নি ছেলেটিকে। তবে কী পুলিশে খবর দিয়ে ভুল করেছে সুমন?
কেয়ারটেকার আঙ্কেলের ইন্টারকমে কল পেয়ে নিচে নেমেই দেখে পাঁচছয় বছরের ছোট্ট বোনের সাথে দাঁড়িয়ে আছে শফিক।
– আপনে না থাকলে ভাই মইরা যাইত, পুলিশ কইছে। ছোট্ট মেয়েটি বলল।
মা বাবাও নিচে নেমে এসেছেন। বাবা দু’জনের হাতে দুটো প্যাকেট দিয়ে বললেন- এই নাও লালফ্রক আর তোমার ঈদের জামা। সুমনের অসহায়ত্ব দেখে আমি কিনে রেখেছিলাম।
আনন্দে ভাইবোন কেঁদে ফেলে।
কৃতজ্ঞতায় বাবাকে জড়িয়ে ধরে সুমন।