দীর্ঘদিন পর সর্বসাধারণের জন্য আবারো উন্মুক্ত হচ্ছে লালদীঘি পার্ক। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আজ শুক্রবার সকাল ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করবেন। এর ফলে এখন থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত নগরবাসী লালদীঘি পার্ক তথা দীঘির চতুর্পাশে হাঁটাচলা করতে পারবেন। এদিকে পার্ক উন্মুক্ত হলেও লালদীঘির ‘দুঃখ’ খ্যাত দেয়ালটি অপসারণ করা হয়নি। সুইমিংপুল নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
লালদীঘি রক্ষণাবেক্ষণে সমপ্রতি তিন বছরের জন্য ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারাদার নিয়োগ করেছে চসিক। চুক্তি অনুযায়ী, ইজারাদার আগামী ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত দীঘিতে মাছ চাষ করার অধিকার পাবেন। তবে তাকে দীঘির চারপাশকে ঘিরে গড়ে তোলা পার্কে লাইটিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বসার জন্য বেঞ্চ নির্মাণ এবং হাঁটার ওয়াকওয়ে সংস্কার করবে। এমনকি নিজস্ব লোক দিয়েই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন ইজারাদার।
চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, লালদীঘি চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। এক সময় বিকেল হলেই লালদীঘিতে মানুষের ঢল নামতো। লালদীঘির সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নরনারী প্রতিদিন হাঁটাহাটি করতে এখানে। সময়ের ব্যবধানে লালদীঘিটি জনসাধারণের চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠে। তাই সেটি সংস্কারের উদ্যোগ নিই। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওয়াকওয়ে ঠিক করে দিয়েছি। পরবর্তীতে আরো নান্দনিকভাবে গড়ার পরিকল্পনা আছে। সকালে এবং বিকেলে মানুষজন যেন হাঁটতে পারে তার ব্যবস্থা করেছি। শুক্রবার (আজ) সবার জন্য খুলে দিবো। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে সকাল ৮টা এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।
লালদীঘির মাঝখানে বিদ্যমান দেয়াল অপসারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ ওটাও অপসারণ করব। কিভাবে অপসারণ করা যায় সে বিষয়ে প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করছি। লালদীঘিতে সাঁতার শেখার ব্যবস্থাও করব। দেয়ালটি অপসারণের পর একপাশে বয়া দিব। যাতে এসব বয়ার সাহায্যে সাঁতার শেখা যায়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৯ সালে জমিদার রায় বাহাদুর রাজ কুমার লালদীঘি দীঘি ও পার্কের গোড়াপত্তন করেন। প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রতীকি মূল্যে লালদীঘি পার্ক চসিকের মালিকানায় নিয়ে আসেন। পরে দীঘি ও পার্কটি আরো নান্দনিক করে তোলা হয়। এই পার্কে একসময় নগরবাসী প্রাতঃ ও বৈকালিক ভ্রমণ করতেন। একপর্যায়ে সন্ধ্যার পর সেখানে আনাগোনা বাড়ে বিপথগামী লোকজনের। অভিযোগ আছে, অসামাজিক কার্যকলাপও চলতো। এতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় বিমুখ হন সেখান থেকে। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় লালদীঘি পার্কের জৌলুশ। একসময় লোকজন সেখানে হাঁটাচলাই বন্ধ করে দেন। অবশ্য চসিকের ৮ জন মালী পার্ক ও পুকুরের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ছিলেন। এদিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর লালদীঘি পার্ক পরিদর্শনে যান প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। ওইদিন তিনি পার্কটি নান্দনিকভাবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। এরপর গত ৬ নভেম্বর পরিদর্শনে গিয়ে পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেন তিনি। যা আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক যাত্রায় পার্কে প্রাতঃভ্রমণে আসা লোকজনকে চসিকের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ডায়াবেটিস, রক্তের উচ্চচাপ পরীক্ষাসহ বিনামূল্য স্বাস্থ্যসেবা পরামর্শ দিবেন।
দেয়াল অপসারণ চায় নগরবাসী : ২০১০ সালে তৎকালীন মেয়র আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর উদ্যোগে চসিক লালদীঘিতে সুইমিংপুল নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। এর অংশ হিসেবে ওই বছরের এপ্রিল মাসে নিয়োগকৃত ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করে দীঘিতে পাইলিং ও এর দক্ষিণ পাশে একটি দেয়াল নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে একই বছরের ১৮ মে সুইমিংপুল নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দীঘির ভেতরের সেই দেয়ালটি আর অপসারণ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৮ মে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সুইমিংপুল নির্মাণের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে একটি রিট করে। রিট শুনানিতে ওইদিন বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মো. দেলোয়ার হোসেনের বেঞ্চ পরবর্তী তিন মাসের জন্য সুইমিংপুল নির্মাণ কাজ স্থগিত করেছিলেন। একইসঙ্গে সুইমিংপুল তৈরি কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২১ আগস্ট বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দচন্দ্র ঠাকুর ‘লালদীঘিকে সুইমিংপুলে রূপান্তরের উদ্যোগকে অবৈধ ঘোষণা’ করে রায় দেন। এদিকে সুইমিংপুল নির্মাণ কাজ বন্ধ করলেও নির্মিত দেয়ালটি অপসারণ না করায় স্থানীয়রা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দীঘির মাঝখানে দেয়াল। দেখতেও অসুন্দর লাগছে। এ যেন লালদীঘিরই দুঃখ। এটি অপসারণ করা উচিত।