লাভলী-রাজের ঘরে এবার পুত্র শাবক

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক আফ্রিকান জেব্রার প্রজননে ফের সাফল্য

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আফ্রিকান প্রজাতির জেব্রার প্রজননে এসেছে আরো একটি সফলতা। জেব্রা দম্পতি লাভলী-রাজের ঘর আলোকিত করে গতকাল বুধবার সকালে জন্ম নেয় আরেকটি ফুুটফুটে বাচ্চা।
এর আগে ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর একই দম্পতির ঘরে আসে প্রথমবারের মতো নতুন অতিথি। স্ত্রী লিঙ্গের সেই বাচ্চার বয়স ইতোমধ্যে একবছর পেরিয়েছে। এবার জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি পুরুষ প্রজাতির।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, তিন বছর সাতমাস আগে দুই জোড়া জেব্রা আনার পর থেকে প্রজনন বাড়াতে পার্ক কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছিলেন। অবশেষে এক বছরের ব্যবধানে বিপরীত লিঙ্গের দুটি বাচ্চা প্রসবের মধ্য দিয়ে সাফারি পার্ক আরো বেশি পূর্ণতা পেয়েছে।
সরেজমিন গতকাল দুপুরে জেব্রা বেষ্টনী ঘুরে দেখা গেছে, নতুন অতিথিকে কাছে পেয়ে বেষ্টনীতে থাকা জেব্রা পরিবারের অন্য সদস্যরাও বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। সার্বক্ষণিক বাচ্চাটিকে যত্ন-আত্তির মধ্যেই ঘিরে রাখছে মা জেব্রা। কোন মানুষের সংষ্পর্শ বুঝলেই বাচ্চাকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে মা জেব্রা। কিছুক্ষণ পর পর বাচ্চাটি মায়ের কাছ থেকে দুধও খাচ্ছে।
জেব্রাগুলোর দেখভালে নিয়োজিত রাজীব কুমার দে বলেন, জেব্রাগুলো পার্কে আনার পর থেকেই সন্তানের মতোই লালন করেছি। আমরা খুব কাছে গিয়েই জেব্রাগুলোকে খাবার খাইয়েছি। দীর্ঘসময় জেব্রাগুলোও সান্নিধ্যে থাকতে থাকতে আমাদের গন্ধ পেলেই কাছে চলে আসে। নতুন অতিথিকে বড় করে তুলতে আমাদেরও যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে।
সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক (ভেটেরিনারী সার্জন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, জেব্রা দম্পতির নতুন অতিথি সুস্থ ও সবল রয়েছে। প্রসবের পর থেকে মায়ের দুধ পান করছে। মায়ের সাথে পায়ে হেটে বেষ্টনীর এখানে-ওখানে ঘুরছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বণ করে বাচ্চাটিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যাতে কোন অঘটন না ঘটে।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, জেব্রা বেষ্টনীতে আরো একটি নতুন অতিথি আগমণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই পার্ক আফ্রিকান প্রজাতির প্লেইন জেব্রার প্রজননের নিরাপদ আবাসস্থল এবং এটিই তাদের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ। তিনি বলেন, পার্কের আড়াই একর জায়গাজুড়ে প্রাকৃতিকভাবে রয়েছে বিভিন্ন ঘাস ও লতাগুল্ম। সেই পরিবেশকে আরো উন্নত করতে পার্ক কর্তৃপক্ষ নেয় নানা উদ্যোগ। চারণভূমি সৃজন ও রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে সৃজন করা হয় জেব্রার খাবারের বাগান। সেখানে লাগানো হয় বাঁশ, শাপলা, কলমি লতা, বিডরী পাতা, পিটালী পাতা, ঝাঁড়ু ফুল, সান ঘাস, প্যারা ঘাস। এছাড়াও পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিদিন পুঁতি ঘাস, গাজর, ভুট্টা ও ভুসি খেয়ে বেড়ে উঠছে জেব্রাগুলো।
পার্ক কর্মকর্তা মাজহার জানান, একটি প্রাপ্তবয়স্ক আফ্রিকান প্রজাতির জেব্রার ওজন হয় ৪০০ কেজি মতো। এরা পৃথিবীতে স্বাভাবিকভাবে ১২ থেকে ১৫ বছর বেঁচে থাকে। পার্কে থাকা তিনটি জেব্রার বয়স বর্তমানে প্রায় ৫ বছর এবং একটির একবছর। এই অবস্থায় নতুন করে জন্ম নিল আরো একটি পুরুষ জেব্রা। জন্মের ছয়মাস পর্যন্ত জেব্রা মায়ের দুধ খেয়ে বাঁচে। এর পর মা একটু একটু ঘাস ও লতাপাতা খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলে। জেব্রা তৃণভোজী ও শান্ত স্বভাবের হয়। এদের প্রধান খাবার নরম ঘাস ও ভুসি। খাদ্যের সন্ধানে এরা বহুদূর পর্যন্ত যায়। আবদ্ধ অবস্থায় জেব্রা ২০ থেকে ২৫ বছর বেঁচে থাকে।
বাংলাদেশ বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা এবং চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, পার্কে আগত নতুন অতিথির যথাযথ সেবা-সুশ্রুষা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
উল্লেখ্য, প্রায় চারবছর আগে বিদেশ থেকে পাচার হয়ে আসার পর যশোর জেলার শার্শা সীমান্তে বনবিভাগ ও কাস্টমসের হাতে ধরা পড়ে এসব জেব্রা। এর পর আদালতের নির্দেশে প্রথমে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এবং সেখান থেকে তৎপ্রধান বন সংরক্ষকের নির্দেশে চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রেরণ করা হয়। এর পর থেকে পার্কে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীর কাছে এসব জেব্রা আকর্ষণীয় হয়ে উঠে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধচিত্রনায়ক সোহেল রানা লাইফ সাপোর্টে