নিষিদ্ধ করার দাবির মধ্যে তিন খণ্ডে বিভক্ত জাতীয় পার্টির নিবাচনি প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে তাদের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে। দুই বছরের কম সময়ের ব্যবধানে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন এই দল থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া রওশনপন্থি ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অংশটিও এখন লাঙ্গল প্রতীক দাবি করছে।
সবশেষ গেল অগাস্টে আলাদা হয়ে যাওয়া আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশটি বলছে, ‘গঠনতন্ত্র’ অনুযায়ী লাঙ্গল প্রতীক কেবলমাত্র তাদের। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মিনী রওশন এরশাদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাদা হওয়ার পর নীরব থাকলেও এখন তার অংশটি বলছে, তারাই লাঙলের ‘একমাত্র দাবিদার’। তবে এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলছেন, তারা ছাড়া অন্য কাউকে লাঙ্গল প্রতীক দেওয়ার ‘সুযোগ’ নেই। তারা আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসেবে ‘লাঙ্গল’ সংরক্ষণ করবে। খবর বিডিনিউজের।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙল প্রকৃত দাবিদার নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ার কথা বলেছেন। মূলত তার বক্তব্যের পরই রওশন ও আনিসুলপন্থিরা লাঙ্গল প্রতীকের ‘দাবিদার’ নিজেরা বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন–ইসির সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকা হবে কিনা, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সময় আসুক, দেখব। এখনও তো সংলাপ শুরু করিনি। ঐকমত্য কমিশন এখনও সংলাপ করছে। আমরা একটু পরে করব। সিভিল সোসাইটিসহ অন্যদের সাথে আলোচনা করে শেষের দিকে দলের সঙ্গে বসব। এখন (জাপা নিয়ে) রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, দেখি কী অবস্থা হয়।
জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। ইতোমধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বাধীন একাংশ নিজেদের ‘মূল জাপা’ দাবি করে ইসিতে চিঠি দিয়েছে। এই ভাঙনের মধ্যে কোনটি আসল জাপা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন সিইসি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি পাঁচটি পেয়েছি, আপনারা কয়টি পেয়েছেন? লাঙ্গলের দাবিদার তো একাধিক। জাপা বললে আমি কনফিউজড, হাফ ডজন আছে। এজন্য কনফিউজড। সময় এলে দেখবেন, ভাবতে দেন।
এরপর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন অংশটি বলেছে, জাতীয় পার্টি (সিইসির) এ বক্তব্যকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করছে। তবে একই সাথে আমরা নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম এবং জনগণের সামনে স্পষ্ট করতে চাই যে, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র এবং আরপিও অনুযায়ী সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ওই কাউন্সিলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আইন ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই নেতৃত্বই জাতীয় পার্টির একমাত্র বৈধ নেতৃত্ব এবং লাঙ্গল প্রতীকের একমাত্র দাবিদার।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সুযোগে গেল ৬ অগাস্ট ‘ঐক্য সম্মেলন’ করে আলাদা হয়ে যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ দলে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। রওশনের অংশ থেকে বেরিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করেছে এই অংশটি।
এই অংশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর পরই নিজেদের লাঙ্গল প্রতীকের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছে রওশনপন্থি অংশ। এই অংশের দপ্তর সম্পাদক আবুল হাসান আহমেদ জুয়েল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে তারা ‘বিস্মিত’। বিবৃতিতে রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মো. মামুনূর রশিদ বলেন, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের বক্তব্যে আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারণ, এই প্রতীকের মালিক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি (নিবন্ধন নম্বর–১২)। এরই মাঝে এই প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি আটটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এককভাবে ৩০০ আসনে কিংবা জোটভুক্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দাবি করেন তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি অতি শিগগিরই বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের অনুকূলে দলীয় নিবন্ধন বরাদ্দ করে সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করবে।
জাতীয় পার্টির বিভক্ত অংশগুলোর নির্বাচনি প্রতীক লাঙল দাবি করার বিষয়ে জিএম কাদের অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতীক গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকবে। এর ব্যতিক্রম করার কোনো আইন বা অধিকার কোনো সংগঠন বা কারও নাই। আর জাতীয় পার্টি তো লাঙ্গল মার্কায় এখন পর্যন্ত নয়টি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। জিএম কাদের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন, সেখানে পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যত্যয় হবার কোন সুযোগ নাই। আমার মনে হয় যেহেতু অনেকগুলো আলোচনা আছে, সেটা নির্বাচন কমিশন বলেছেন, আইন বিচার করে ডেফিনেটলি অবশ্যই তাদেরকেই (জিএম কাদের অংশ) লাঙ্গলের অধিকারী ঘোষণা করবেন। আইনগতভাবে এর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।