মাঠ এবং মাঠের বাইরে খুব বেশি চাপের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ দল। আর সে চাপ সামলাতে গিয়ে একরকম হিমশিম খাচ্ছে টাইগাররা। যার স্পষ্ট প্রভাব বাংলাদেশ দলের খেলায়। সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে টানা আট ম্যাচে হেরে বাংলাদেশ দল বলতে গেলে একেবারে ব্যাকফুটে। এতটা কঠিন সময় শেষ কবে পার করেছে বাংলাদেশ সেটা মনে করতেই যেন কষ্ট হচ্ছে ক্রিকেটারদের। আবার এরকম কঠিন সময় পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পও রয়েছে টাইগারদের। সেরকম আরেকটি গল্পের প্রত্যাশায় আজ থেকে আবার মাঠে নামছে বাংলাদেশ দল। তবে এবার টি-টোয়েন্টি নয়। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নামছে টাইগাররা। যদিও টেস্ট ক্রিকেটেও সাম্প্রতিক সময়টা খুব একটা ভাল নয় বাংলাদেশের অবস্থা। সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারালেও এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে নিজেদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে টাইগাররা। এবার পাকিস্তানের সামনে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে আজ থেকে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মাঠে নামছে দুদল।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান দারুণ ক্রিকেট খেলছে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও লিগ পর্বে হারেনি একটিও ম্যাচ। বাংলাদেশে এসেও জয়ের রাস্তাতেই ছিল বাবর আজমের দল। টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তান তাদের শেষ তিন সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে তাদের মাটিতে সিরিজ ড্র করে এসেছে। কাজেই পাকিস্তানের ফর্ম কতটা উচুতে সেটা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তেমন একটি ইনফর্ম দলের বিপক্ষে আজ থেকে লড়াই করতে হবে টাইগারদের। গতকালই পাকিস্তান তাদের ১২ জনের দল ঘোষণা করেছে। তরুণ আর অভিজ্ঞ মিলিয়ে বেশ শক্তিশালী দল নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামছে পাকিস্তান।
এদিকে বাংলাদেশ দলে নেই সেরা তারকা তামিম ইকবাল। সাকিবেরও খেলা হচ্ছে না এই ম্যাচে। শুধু তাই নয় পুরো সিরিজেই খেলতে পারবেন না সাকিব। তাই বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জটা আরো একটু কঠিন হয়ে গেল। মোমিনুল হকের নেতৃত্বে টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছে দুই তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় এবং রেজাউর রহমান রাজা। এছাড়া বাকিরাতো রয়েছেই। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বেশ ভাল করেছে টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটারদের সবাই। আর সেটোই ভরসার জায়গা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। লম্বা পরিসরের ক্রিকেটের মধ্যেই ছিল টেস্ট দলের প্রায় সব ক্রিকেটার। যদিও জাতীয় লিগের বোলিং আর পাকিস্তানের বোলারদের বোলিংয়ে আকাশ পাতাল ফারাক। তারপরও আশাবাদী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মোমিনুল হক। ভাল কিছু করার প্রত্যয় টাইগার দলপতির কথায়। পরিসংখ্যান আর অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এগিয়ে পাকিস্তান তাতে কোন সন্দেহ নেই। দুদলের ১১ মোকাবেলায় ১০টি জয় পাকিস্তানের। একটি ম্যাচ ড্র করেছে বাংলাদেশ। তবে মাঠের লড়াই আর পরিসংখ্যান সব সময় এক হয় না। অনেক সময় পরিসংখ্যান বদলে যায় মাঠের পারফরম্যান্সে। আর সেটাই করতে চায় বাংলাদেশ দল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
চট্টগ্রামে বরাবরই লাকি গ্রাউন্ড বলে বিবেচিত বাংলাদেশের জন্য। যদিও এই মাঠে শেষ দুই ম্যাচে বেশ বেদনার পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ম্যাচে হারের ক্ষত এখনো জ্বালা দেয় বাংলাদেশকে। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের মুখের গ্রাস। সেটা যেন কেড়ে নিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। তবে সেসব এখন অতীত। সামনের দিকেই কেবল চোখ এখন বাংলাদেশের।
দলের ব্যাটিংয়ের দায়িত্বটা নিতে হবে মোমিনুল, মুশফিক, সাদমান, সাইফ, শান্ত, লিটনদের। দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বলতে মোমিনুল আর মুশফিক। পেস বোলিংয়ে আবু যায়েদ রাহির সাথে দুই তরুণ এবাদত এবং প্রথমবার ডাক পাওয়া রাজা। যদিও স্পিন আক্রমণটাকে জোরালো করেছে বাংলাদেশ। তাইজুল, নাঈম, মেহেদী হাসান মিরাজ তিন জনই রয়েছেন দলে। যদিও পাকিস্তানের বিপক্ষে স্পিন আক্রমণ দিয়ে কতটা সফল হতে পারবে বাংলাদেশ সেটা বড় একটা প্রশ্ন। চট্টগ্রামে বরাবরই স্পোর্টিং উইকেট। এবারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তাই এখানে ব্যাটসম্যানদেরই দায়িত্বটা নিতে হবে। পাকিস্তানের বিশ্বসেরা বোলিং এর বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কতটা লড়াই করতে পারে সেটাও এখন দেখার বিষয়। বছরের শেষভাগে এসে নতুন যাত্রা শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। আর সে জন্য প্রস্তুত টাইগাররা।