রমজানকে সামনে রেখে আমদানিকৃত পণ্য খালাসে লাইটারেজ জাহাজের সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে দেখা দেওয়া এই সংকট উত্তরণে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নৌ পরিবহন অধিদপ্তর। আগামীকাল বিকালে অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ, খাদ্য অধিদপ্তর, জাহাজ মালিক এবং আমদানিকারকদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা পণ্য বোঝাই মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাসে গতি আনতে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হবে।
জানা যায়, রমজানকে সামনে রেখে প্রচুর ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু এসব পণ্যের একটি বড় অংশ দেশের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্কে আসছে না। গম, ডাল, ছোলা, ভুট্টা, চিনি, সয়াবিন সিড, চনার চালান নিয়ে আসা মাদার ভ্যাসেলগুলো থেকে পণ্য খালাস থমকে গেছে। বড় বড় এসব জাহাজ পণ্য নিয়ে সরাসরি বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করতে পারে না। বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান নিয়ে জাহাজগুলো লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের প্রয়োজনীয় লাইটারেজ জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। পণ্যের এজেন্টদের একেকটি মাদার ভ্যাসেলের বিপরীতে দেওয়া ৩/৪টি লাইটারেজ জাহাজের চাহিদার স্থলে মাত্র ১টি করে জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এতে বহির্নোঙরে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে আমদানিকারকদের খরচও। একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন অলস বসে থাকলে অন্তত ১৫ হাজার ডলার ফিঙড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি গচ্ছা দিতে হয়। বহির্নোঙরে গতকাল পণ্য বোঝাই ৪১টি জাহাজ ছিল। এগুলোর কোনোটিতে স্বাভাবিক সময়ের অর্ধেক, আবার কোনোটিতে এক চতুর্থাংশ কাজ হচ্ছিল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি জাহাজেরই অবস্থানকাল বাড়ছে।
লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেল বা বিডব্লিউটিসিসির নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জিএম খান লাইটারেজ জাহাজের সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের অনেকগুলো জাহাজ ভাসমান গুদাম বানিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে সাগরে ভাসছে আড়াইশরও বেশি লাইটারেজ জাহাজ। বাজারে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে আমদানিকারকরা পণ্যগুলো খালাস না করে সাগরে ভাসমান গুদাম বানিয়ে রেখেছেন বলেও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।
আমদানিকারকদের প্রতিনিধিরা বলছেন, সংকট আসলে ভাসমান গুদাম নয়। সংকট হচ্ছে বিশৃঙ্খলায়। পণ্যের এজেন্টরা বলেছেন, পণ্য খালাস হওয়ার পর কিছু কিছু জাহাজ নিজেদের মতো করে পণ্য পরিবহনের জন্য বিডব্লিউটিসিসির সিরিয়ালে আসে না। আবার কোনো কোনো জাহাজ মালিক ভোগ্যপণ্য পরিবহন করতে চান না। তারা খালি থাকলেও ঘোষণা না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। বাড়তি ভাড়া পাওয়ায় চট্টগ্রামের বহু জাহাজ মোংলা এবং পায়রা বন্দরে চলে গেছে। আবার বহু জাহাজ বিডব্লিউটিসিসির সিরিয়ালে চলাচল করে না। এতে চট্টগ্রামে জাহাজের সংকট দেখা দিয়েছে। দুই–আড়াইশ জাহাজের অভাবে পরিস্থিতি এত নাজুক হওয়ার কথা নয়।
বিডব্লিউটিসিসির নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জিএম খান বলেন, আমদানিকারকরা মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস করার পর অন্তত ২০ দিনের মধ্যে যদি লাইটারেজ জাহাজ খালি করে দিতেন, তাহলে এত বেগ পেতে হতো না। কিন্তু এক মাসেও জাহাজ খালি করা হচ্ছে না। সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী ২৬৯টি লাইটারেজ জাহাজ গত ১ মাসের বেশি সময় ধরে ভাসমান গুদাম হিসেবে ভাসছে। প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন রুটে পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্কে গতি আনতে আগামীকাল বিকালে উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারকে উপস্থিত থাকার জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে।