শারদীয় দুর্গাপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমার ছুটি এক সাথে হয়েছে। দুই ধর্মাবলম্বীদের দুই বড় উৎসব উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১২ দিনের ছুটি চলছে। এই লম্বা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুরা অবকাশ যাপনে বেড়াতে আসছেন দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে। এতে পর্যটনের এই নগরীতে ভ্রমণপিয়াসীদের ঢল নেমেছে।
হোটেল মালিকেরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। শুক্রবার থেকে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সব ধরনের হোটেল–মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসে শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়। এতে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে অধিকাংশ কক্ষ ভাড়ায় ৩৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। তবে সাপ্তাহিক ছুটি পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যটকের বেশ উপস্থিতি রয়েছে এবং তা পুরো সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ১ ও ২ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক সমাগম হবে। আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত দৈনিক লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসবেন। সে অনুযায়ী কক্ষ বুকিং হচ্ছে। হোটেল–মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ ও আশপাশের এলাকায় শতাধিক হোটেল–মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুযোগ আছে। চলতি পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, যা পর্যটনের জন্য সুখবর। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সব সময় সতর্ক করা হচ্ছে, যেন কোনো অবস্থায় পর্যটক হয়রানি না হয়। কক্সবাজার সৈকতের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট গত শুক্রবার থেকে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর।
জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মী মাহবুব আলম বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে সমুদ্র সৈকতের তিন পয়েন্টই পর্যটকে ঠাসা হয়ে উঠে। পাশাপাশি দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফের সৈকতে ঘুরছেন তারা।
গতকাল রোববার বিকেলে সুগন্ধা ও লাবণী সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটি অতিবাহিত হলেও পর্যটকে ভরপুর পুরো সৈকত। বিভিন্ন বয়সের পর্যটকেরা সাগরে গোসলে নেমে হৈ–হুল্লোড় করছেন। একই সাথে ঘোড়া, বিচবাইক ও ওয়াটারবাইকে চড়ে আনন্দে মেতে উঠেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন লাইফগার্ড ও বিচ কর্মীরা। পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশই সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘিরে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন।
ফেনী থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা কলেজ শিক্ষক আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘বাচ্চাদের স্কুল ছুটি হওয়ায় বেড়াতে বেরিয়েছি। একই সাথে আমার কলেজও বন্ধ। এতে এবার লম্বা সময়ের জন্য বেড়ানো যাবে।’
তাঁর মতো অনেকেই বিশেষ ছুটিতে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। টাঙ্গাইল থেকে আসা সুমন আখন্দ স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে শনিবার সকালে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘আসলে কক্সবাজারের সৌন্দর্য অতুলনীয়। এই সমুদ্র দারুণ বিমোহিত করে আমার বাচ্চাদের। এ জন্য সুযোগ পেলে বছরে দু–একবার ঘুরতে আসি।’
কক্সবাজারে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পর্যটকদের নিজের জায়গা থেকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সমুদ্র উত্তাল থাকায় সৈকতে গোসলে নামার ক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুসরণের অনুরোধ করেছেন সি–সেইফ লাইফ গার্ডের আঞ্চলিক কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এখন সমুদ্র উত্তাল আছে, সেই সঙ্গে গুপ্তখালও তৈরি হয়েছে, তাই ঝুঁকি এড়াতে লাইফগার্ডের নির্দেশনা মানা জরুরি।’
ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে এবং লাল পতাকা টাঙানো স্থানে গোসলে না নামতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। পর্যটকেরা যেন ভোগান্তিতে না পড়েন, সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।’
কক্সবাজারের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, ‘পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ রয়েছে।’
এদিকে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়তি যাত্রী চাহিদা মেটাতে ঢাকা–কক্সবাজার ও ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে ৪ জোড়া ‘পূজা স্পেশাল’ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা–কক্সবাজার রুটে ৩ জোড়া এবং ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে ১ জোড়া ট্রেন চলবে।