লবণাক্ততা ও পানি সংকট কাটাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

অর্থায়নে আগ্রহী ইডিসিএফ, প্রকল্পের ধারণাপত্র প্ল্যানিং কমিশনে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ মে, ২০২৫ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

শুষ্ক মৌসুমের প্রায় তিনচার মাস চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎসস্থলে লবণাক্ততা দেখা দেয়। গত কয়েক বছর ধরে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ওয়াসার মদুনাঘাট ও মোহরা পানি শোধনাগারের উৎপাদিত পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। এতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানির উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে নগরীতে পানির সংকট দেখা দেয়। এই দুই সংকট (পানির সংকট এবং লবণাক্ততা) কাটিয়ে উঠতে চট্টগ্রাম ওয়াসা ৫ হাজার কোটি টাকায় নতুন একটি প্রকল্পে হাত দিয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানান, দিন দিন চট্টগ্রাম নগরীতে পানির চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে নগরীর পানির চাহিদা প্রায় ৫৬ কোটি লিটার। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা উৎপাদন করছে ৪৬ থেকে ৪৮ কোটি লিটার। ২০৩৫ সাল নাগাদ নগরীতে পানির চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৭০ কোটি লিটারে।

আগে সাধারণত বছরের ১৫২০ দিন লবণাক্ততা নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো ওয়াসাকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার পাশাপাশি কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি নির্গমনের প্রবাহ কম থাকায় লবণাক্ততা প্রায় তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্যমতে, লবণাক্ততার কারণে প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমে দৈনিক ৯ কোটি লিটার উৎপাদন সক্ষমতার মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্প এবং ৯ কোটি লিটার উৎপাদন সক্ষমতার মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পে পানির উৎপাদন ৩ থেকে ৫ কোটি কমে যায়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ২০৩৫ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম নগরীতে পানির চাহিদার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৭০ কোটি লিটারে। এই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বর্তমানে মোহরা পানি শোধনাগারের পাশে ইউনিট২ নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই প্রকল্পের পানি উৎপাদনের সক্ষমতা হবে ৪০ কোটি লিটার। প্রথম পর্যায়ে আমরা দৈনিক ২০ লিটার উৎপাদন করব। বর্তমানে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প যেটি আছে, তার পাশে মোহরা ইউনিট২ করার মতো জায়গা রয়েছে। এই একই প্রকল্পের অধীনে লবণাক্ততা নিরসনের জন্যও একটি প্রকল্প যুক্ত রয়েছে। একই প্রকল্পে দুটি কাজ হবে।

তিনি বলেন, প্রতি বছর গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাতের অভাবে মোহরা ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। ফলে পানি উৎপাদন কমে যায়। লবণাক্ততা সমস্যার সমাধানে ২০২২ সালে ফ্রান্সভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা সুয়েজ একটি ধারণাপত্র দিয়েছে। এতে বিকল্প ইনটেক স্টেশন নির্মাণ, প্রিসেটেলমেন্ট রিজার্ভার, নতুন শোধনাগার নির্মাণকে প্রাধান্য দিয়ে এই প্রকল্পের সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশের আলোকে আমরা একটি প্রকল্পের ধারণাপত্র তৈরি করে অর্থায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে পাঠিয়েছি।

প্রকৌশলী আরিফুল বলেন, প্রকল্পটি অর্থায়নে আগ্রহী ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। প্রকল্পটির ধারণাপত্র প্ল্যানিং কমিশনে পাঠিয়েছি। প্ল্যানিং কমিশন থেকে ইআরডির মাধ্যমে দাতা সংস্থার কাছে যাবে। এরপর আমরা প্রকল্পের ডিটেইল ফিজিবিলিটি স্টাডি করব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোহরা ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগারের যে পয়েন্ট থেকে পানি উত্তোলন করা হয় সেটার ইনটেক পয়েন্ট আরো ১০ কিলোমিটার দূরে হবে। তাহলে আর লবণাক্ততা থাকবে না। আমরা দাতা সংস্থার কাছে প্রকল্পের যে ধারণাপত্র পাঠিয়েছি তাতে এই প্রকল্প ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক পাঠাবে অর্থায়নকারী সংস্থাটি। পানির ভবিষ্যৎ চাহিদা মাথায় রেখে তিন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলুটেরাদের জব্দ টাকায় তহবিল হবে, ব্যয় হবে জনকল্যাণে : গভর্নর
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে বিদেশি অস্ত্র ও ইয়াবাসহ আটক তিন রোহিঙ্গা