ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মাসে হওয়া সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ও তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অংশে নয়া দিল্লির হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা।
জাতিসংঘের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, চীন, রাশিয়াসহ সংযুক্ত আরব আমিরাত এ হামলার পরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে বেশিরভাগ বার্তাতেই আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানে ভারতের হামলার মাধ্যমে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা যে মাত্রায় গেল, তাকে ‘লজ্জাজনক’ বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা ঠিক ওভাল অফিসে ঢোকার সময়ই খবরটা পেলাম। আমি মনে করছি অতীতের কিছু ঘটনার উপর ভিত্তি করে মানুষ জানত যে কিছু ঘটতে চলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। তারা অনেক, অনেক যুগ ধরে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। সঠিক করে বলা হলে, এক শতক ধরে তারা লেগে আছে বলে মনে করতে পারেন। আশা করছি এটি দ্রুতই শেষ হবে। খবর বিডিনিউজের।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তার মুখপাত্র বলেন, নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে মহাসচিব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সামরিক সংঘাতের ভার ‘বিশ্ব বহন করতে পারবে না’ বলে গুতেরেস মন্তব্যও করেছেন।
পাকিস্তানে ভারতের হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন, তারা উত্তেজনা আর না বাড়িয়ে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনেরও আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের হামলাকে ‘হতাশাজনক’ অভিহিত করে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার, শান্ত ও সংযত থাকার এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে এমন পদক্ষেপ এড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে পাকিস্তানে হামলার পর ভারত সমর্থন পেয়েছে ইসরায়েলের। ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুবেন আজার এঙে বলেছেন, ইসরায়েল ভারতের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করে। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো জায়গা নেই।
জাপানের মন্ত্রিসভার মুখ্য সচিব ইয়োশিমা হায়াশি বলেছেন, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জোরালো নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। একইসঙ্গে আমরা এ নিয়েও উদ্বিগ্ন যে– হামলা, পাল্টা হামলার মাধ্যমে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং তা পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমরা ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি সংযম প্রদর্শন ও সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানাই।
ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনার প্রসঙ্গে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘাতের বিষয়ে তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। দুটি দেশকেই সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং তার যেকোনও বহিঃপ্রকাশের তীব্র নিন্দা করে এবং এটিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
তুরস্ক বলেছে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান–শাসিত কাশ্মীরে ভারতের হামলা যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা (তুরস্ক) পাকিস্তান ও ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা এর ওপর নজর রাখছেন। দআমরা বেসামরিক ব্যক্তি ও স্থাপনার ওপর যেকোনো উসকানিমূলক পদক্ষেপ ও হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আশা করি উত্তেজনা কমাতে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ–নোয়েল ব্যারো দিল্লি ও ইসলামাবাদকে ‘সংযম প্রদর্শনের’ আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে একটি ফরাসী টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের অভিশাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ভারতের আকাঙ্ক্ষা আমরা বুঝি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা কমানো এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকি হয়ে ওঠে এমন উত্তেজনা’ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।