লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ শতাংশ কম গাড়ি চলছে টানেলে

সাড়ে তিন মাসে ৬ লাখ গাড়ি পারাপার ।। ১৪ কোটি টাকার টোল আদায় ।। সমন্বিত পরিকল্পনায় বাড়বে ব্যবহার

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | শুক্রবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালুর পর সাড়ে ৩ মাসে আদায় হয়েছে ১৪ কোটি টাকার টোল। চলাচল করেছে প্রায় ৬ লাখ গাড়ি। গত বছর ২৯ অক্টোবর টানেল চালুর পর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০৮ দিনের হিসাবে দেখা গেছে প্রতিদিন গড়ে আয় হয়েছে ১৩ লাখ টাকার বেশি। দৈনিক চলাচল করেছে ৫,২৬০টি গাড়ি। এই হিসাব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ শতাংশ কম। বর্তমানে মাত্র ৩০ শতাংশ হলেও যত দিন যাবে সমন্বিত পরিকল্পনায় টানেলের ব্যবহার বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তালিকা থেকে জানা গেছে, টানেল চালুর পর প্রথম শুক্রবার অর্থাৎ ৩ নভেম্বর ১৪ হাজার ৭৯৮টি গাড়ি পারাপার হয়। যা এপর্যন্ত সর্বোচ্চ। আর ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সবচেয়ে কম সংখ্যক মাত্র ৯০৪টি গাড়ি পারাপার হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট চলাচল করেছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৫টি গাড়ি। আয় হয়েছে ১৪ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার ৭৫০ টাকা।

বঙ্গবন্ধু টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফাত বলেন, টানেলের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যত দিন যাবে আয়ও বহুগুণ বেড়ে যাবে।

ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল নির্মিত হয়। চট্টগ্রাম থেকে কঙবাজার হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে সড়ক নেটওয়ার্কে এটি আওয়ামী লীগ সরকারের বাস্তবায়িত দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প। টানেলের সামগ্রিক ব্যয়ের মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকার চীনা ঋণ ২ শতাংশ সুদসহ আগামী ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। ২০২৫ সাল থেকে টানেলের আয় দিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করা শুরু করবে সরকার। টানেলের নির্মাণ ব্যয় তুলে আনাসহ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ মূলত আদায়কৃত টোল থেকে নির্বাহ হওয়ার কথা।

২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে যে সম্ভাব্যতা জরিপ হয় তাতে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন পার হবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। কিন্তু গত সাড়ে ৩ মাসের পরিসংখ্যানে ৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ গাড়ি চলাচলের দিনও সম্ভাব্যতা জরিপের গড় হিসাবের চেয়ে আড়াই হাজার গাড়ি কম পার হয়েছে। যদিওবা ওই দিন টানেলের আনোয়ারা প্রান্ত ও পতেঙ্গা প্রান্তে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে যে হারে গাড়ি পার হচ্ছে তা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩০ শতাংশ।

জানা যায়, এই সাড়ে ৩ মাসে টানেল দিয়ে যেসব যান চলাচল করেছে তার অধিকাংশই ব্যক্তিগত। এখনও টানেল দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো রুটের গণপরিবহন চালু হয়নি। তাছাড়া দূরপাল্লার অনেক বাস এখনও শাহআমানত সেতু দিয়ে কর্ণফুলী পাড়ি দিচ্ছে। ফলে বঙ্গবন্ধু টানেলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কঙবাজারে চলাচলকারী সব যানবাহনের চাপ পড়ছে না।

সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে সম্ভাব্য যান চলাচলের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আদায় করা টোল থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ১২৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। টানেল চালুর পর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে এর মধ্যে চারটি স্ক্যানার যন্ত্র ক্রয়ের খরচও রয়েছে। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা কাজ শুরুর সময় ঠিকাদারকে মোবিলাইজেশনের খরচও দিতে হয়েছে। টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী, নির্মাণের পর টানেলটিতে দুই ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দরকার হবে। এর মধ্যে একটি হলো ‘ডেইলি মেইনটেন্যান্স’। টানেলের ভেতরে বিদ্যুৎ সরবরাহ, কার্বন ডাইঅঙাইড অপসারণ করে অঙিজেন সরবরাহসহ বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজের পেছনে বছরে ১৮ লাখ ডলার (২০১২ সালের হিসাবে) খরচ হবে। এছাড়া প্রতি পাঁচ বছর পর একবার বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, যেটাকে বলা হয় ‘রেগুলার মেইনটেন্যান্স’। একবার রেগুলার মেইনটেন্যান্স করতে খরচ হবে ১৯ লাখ ডলার। রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎজ্বালানিসহ আনুষঙ্গিক পরিচালন কাজে বছরে ব্যয় হবে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এ পরিচালন ব্যয় প্রতি বছর ৮ শতাংশ হারে বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয় সমীক্ষা প্রতিবেদনে। তবে টানেল ঘিরে ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করেছে আশপাশের এলাকা। বাঁশখালী হয়ে কঙবাজার পর্যন্ত টানেল সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হলে, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এর ব্যবহার বেড়ে যাবে বহুগুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, টানেল ঘিরে এখনই পরিকল্পিত উন্নয়ন দরকার। পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল, আবাসিক এলাকা ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। তাতে টানেলের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণ ব্যাপক সুফল পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জবর দখল হয়ে যাচ্ছে : ইউনূস
পরবর্তী নিবন্ধ১ মার্চ থেকে নতুন বাজার ব্যবস্থাপনা