লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে বেশ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজন নিহত হয়েছেন; যাকে যুবদল নেতা বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ ছাড়া পুলিশের ১৬ সদস্যসহ প্রায় একশ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে শহরের সামাদ স্কুল মোড়ে তার ওপর হামলা হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া। তিনি দাবি করেন, সামাদ স্কুল মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা সজিব নামে ওই কর্মীর ওপর হামলা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি মদিনউল্লাহ হাউজিংয়ের একটি বাড়ির নিচে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম লিটন বলেন, সজীব সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি নুরুল্লাপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। সজীবের মরদেহ লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে। তারপর তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। একজনের মৃত্যু ছাড়া পুলিশসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ইটের আঘাতে ২০–২৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশকে রাবার বুলেট, কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের পাশাপাশি লাঠিপেটাও করতে হয়।
ফেনী : বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে ফেনী শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ–সাংবাদিকসহ অন্তত শতাধিক আহত ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ব্যবহার করে। এ সময় পুলিশের স্টিকারযুক্ত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। সংঘর্ষের ছয় সাংবাদিক, ১০ পুলিশ সদস্য, যুবদল–ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
বগুড়া : বগুড়ায় পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষের সময় কাঁদুনে গ্যাসের ধোঁয়ায় শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৩২ জন বগুড়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছে। গতকাল দুপুরে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. শফিক আমিন কাজল জানান। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইয়াকুবিয়ার মোড় হয়ে বিএনপি পদযাত্রা নিয়ে শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বিএনপির নেতা–কর্মীরা পুলিশের উপর ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ একাধিক কাঁদুনে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে। ওই কাঁদুনে গ্যাসের ধোঁয়া পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে রাস্তার পাশে ইয়াকুবিয়া স্কুলের শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হতে থাকে। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালের নার্সিং সুপার ফিরোজা বেগম বলেন, বেশি অসুস্থদের হাসপাতালের অব্যবহৃত বার্ন ইউনিটের আইসিইউ রুমে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কারও চোখে জ্বালাপোড়া বেশি। কারও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে।
জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ এবং বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকালে শহরের রেলগেট এলাকায় এ সংঘর্ষ হয় বলে জানান জয়পুরহাট পুলিশ সুপার নূরে আলম। তিনি বলেন, পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। সংঘর্ষে সাধারণ পথচারীসহ দুই দলের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।