অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ সম্পদের বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন প্রদীপ। চাকরিতে যোগদানের মাত্র আট বছরের মাথায় ২০০৪ সালে নগরীর পাথরঘাটায় স্ত্রী চুমকি কারণ দাশের নামে চার শতক জমি কিনে ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’ নামে একটি বিশাল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান। আদালত ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর আয় বহির্ভূত যেসব সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন তার মধ্যে স্ত্রীর নামে করা বাড়ি ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’ও আছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে অন্যান্যদের মতো জেনেছেন ছয়তলা ভবনটির ১১টি ফ্ল্যাটে থাকা বাসিন্দারাও। গতকাল তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানা গেছে, তারা নিজেরাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন মিডিয়ার কল্যাণে। তবে ভাবনায় পড়েছেন আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে তাদের বাসা ছেড়ে দিতে হবে কিনা। এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চান নি আজাদীর কাছে। শুধু তাই নয়, গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষীকুঞ্জের মূল গেইটের পাশাপাশি পকেট গেইটও বন্ধ। দীর্ঘক্ষণ বাইরে অপেক্ষার পরও কেয়ারটেকার টুকু বাবু গেইট খুলে দেন নি। পরে ভবনের এক ভাড়াটিয়া মহিলা মূল গেইট সামান্য খুলে বাচ্চাকে নিয়ে বের হলে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়। ভেতরে ভবনের কলাপসিবল গেইটটিও আটকানো। কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ছাদে ফুল বাগানে পানি দেওয়ার অজুহাতে তড়িঘড়ি উপরে উঠে যান।
বাইরে থেকে পাশাপাশি একই প্যাটার্নের তিনটি ভবন রয়েছে। প্রতিটি ভবনের পৃথক গেইট। কিন্তু ভেতরে ঢুকে দেখা যায় ভবন তিনটির পার্কিং একই। ভবনের এক বয়স্ক ব্যক্তি জানালেন, লক্ষীকুঞ্জ নামের ভবনটি প্রদীপের স্ত্রীর নামে। দ্বিতীয় ভবনটি তাঁর স্ত্রীর বড়বোনের স্বামী নিপু বাবুর এবং তৃতীয় ভবনটি প্রদীপের শ্বশুর অজিত কারণের। প্রায় একই সময়ে নির্মিত ভবন তিনটি। লক্ষীকুঞ্জের ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলতে চাইলেও কেউ দরোজা খুলেন নি। তবে গেইটের বাইরে রাস্তায় দু’জন ভাড়াটিয়ার সাথে আলাপ হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, তারা যেভাবে বসবাস করছেন, সেভাবেই করবেন, কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ হঠাৎ করে বাস্তবায়িত হলে, যদি বলা হয় তাদের চলে যেতে তবে তারা কী করবেন, সে নিয়েই আলাপ করছিলেন দু’জনে।
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহম্মদ মহসীনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আদালতের নির্দেশ এখনো হাতে পাইনি। আদেশ পেলে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্রোক করলে ভাড়াটিয়ারাদের ব্যাপারে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদেশে নিশ্চয়ই তা লেখা থাকবে। আর যদি লেখা না থাকে তবে আদালতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে এ সম্পর্কে বলেন, সম্পত্তি ক্রোক করার অর্থ হলো, মামলা চলাকালীন সময়ে তিনি ঐ সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবেন না। মামলা নিষ্পত্তির পর তিনি খালাস পেলে তাঁর সম্পত্তি তাঁকে ফেরত দেওয়া হবে, নয়তো সরকারি কোষাগারে চলে যাবে। এ অবস্থায় ভাড়াটিয়ারা ঐ ভবনেই থাকবেন। ভাড়া দেবেন আদালতে।