বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছে এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কমিটির সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের ভাষায়, রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেও মানবিক কারণে তাদের উপর কঠোর হওয়া যাচ্ছে না। আবার দেশের আইনে এ বিদেশিদের বিচারও করা যাচ্ছে না। সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা ওঠে। এদিনই উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন রোহিঙ্গা নিহত হন। খবর বিডিনিউজের।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার, মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গা এসে এদেশে আশ্রয় নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে আশ্রয় দিয়েছেন, তারা আইনশৃঙ্খলার প্রতি খুবই হুমকিস্বরূপ আরকি। নিজেরা আইনশৃঙ্খলা মানতে চায় না। তাদের জন্য ভাসানচরে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে… সেখানে যে সুব্যবস্থা আছে, সেখানেও তারা যাচ্ছে না। কমিটি রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে মাদক, নাশকতা ইত্যাদি বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমরা ওদেরকে আইডি কার্ড না দিলেও ওরা যেভাবেই হোক সিম কার্ড এনে ব্যবহার করে। আমাদের দেশ থেকে পাচ্ছে না, কিন্তু মিয়ানমার থেকে সিম কার্ড এনে সেগুলো ব্যবহার করে। তারা অত্যন্ত আনরুলি আপনারা দেখেছেন। রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত পড়ার বিষয়টি তুলে তিনি বলেন, সেখানে বিভিন্ন স্থানীয় ক্রাইমের সাথে, জাতীয় ক্রাইমের সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলছে এবং নিজেদের মধ্যেও মারামারি, হানাহানি, মাদক ইত্যাদি নিয়ে যেভাবে আছে, মানবিক কারণে কিছু বলাও যায় না। যেহেতু তারা আশ্রিত, আমাদের দেশের আইন দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারও করা যায় না, বিচারও করা যায় না। কারণ তারা তো আমাদের দেশের নাগরিক না। তাদেরকে বিচার করা, গ্রেপ্তার করার দেশে কোনো আইন নেই। কিছু করাও যায় না আইনানুগভাবে।
তুলনা করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দেশের মানুষ শরণার্থী ছিল, তারা কখনোই সেই দেশের আইনশৃক্সখলা ভঙ্গ করেনি বা সে দেশের কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়নি। কক্সবাজারে কর্মরত কিছু বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে রোহিঙ্গারা উৎসাহ পায় দাবি করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা সেখানে (কক্সবাজারে) আছে, আমরা মনে করি যাদের মদদে তারা উৎসাহ পায়।
রোহিঙ্গাদের বাদ দিলে দেশের সার্বিক আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে মোজাম্মেল বলেন, এতে জনগণও স্বস্তিতে রয়েছে। যদিও দেশে ছোটখাটো ঘটনা ঘটে, এটি স্বাভাবিক। এমন কোনো মেজর ঘটনা ঘটেনি, যাতে উদ্বিগ্ন হতে হয়।
মাদক নিয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির উল্লেখ করে মন্ত্রী চাকিরতে নিয়োগে ডোপ টেস্ট এবং চাকরিরতদের মধ্যে মাদকসেবীদের বাদ দেওয়ার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, মাদকসেবীদের নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রচার–প্রাচারণা চালানো হচ্ছে। তবে আমরা উদ্বিগ্ন মাদকসেবীদের সংখ্যা আশানুরূপ কমেনি, অনেকক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মাদক যেসব রুটে আসে, তা বন্ধ করার জন্য আইনশৃক্সখলা বাহিনী বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ সবাই তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২২ কেজি আইস উদ্ধার করা হয়েছে। আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, কোনো রুট দিয়ে যাতে মাদক ঢুকতে না পারে।