জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশকে এই সমস্যার জন্য তহবিল নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী সংক্রান্ত হাই–রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান শুক্রবার আসন্ন জাতিসংঘের রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে নিয়ে আলোচনা করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন। খবর বাসসের। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে এই সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহাসচিব কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথা স্মরণ করে রোহিঙ্গাদের জন্য তার উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তারা নিয়মিত বৈষম্য ও মৌলিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের শিকার। তিনি আট বছর ধরে মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অব্যাহত উদারতার প্রশংসা করেন। গুতেরেস এই সংকটময় মুহূর্তে রাখাইনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের অপরিহার্য ভূমিকার স্বীকৃতি দেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী সংক্রান্ত হাই–রিপ্রেজেন্টেটিভ রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ড. খলিলুর রহমান মহাসচিবকে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে একত্রিত করার জন্য অনুরোধ করেন। যাতে এই বছর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে এই সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। ড. রহমান রাখাইন রাজ্যের গুরুতর মানবিক পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরে সতর্ক করে দেন যে, আসন্ন দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সংঘাতপূর্ণ রাজ্যটিতে আরো অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। তিনি হ্রাস পাওয়া বহিরাগত তহবিল পরিস্থিতির দিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং পর্যাপ্ত সম্পদ সংগ্রহের জন্য তার সদিচ্ছার আহ্বান জানান। তিনি গুতেরেসকে সাহায্য প্রদানকারী ও গ্রহীতাদের নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানান।
এ সময় সেখানে সহিংসতা, ভয়ভীতি, বৈষম্য ও স্থানচ্যুতি থেকে মুক্ত রাখতে এবং বিমান ও বোমা হামলা বন্ধ নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়। ড. রহমান মহাসচিবকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টা সম্পর্কেও অবহিত করেন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের আরো শক্তিশালী ভূমিকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। জবাবে, মহাসচিব দাভোসে প্রধান উপদেষ্টার সাথে তার সামপ্রতিক বৈঠকের কথা স্মরণ করেন এবং সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতি দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ব্যবস্থায় বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বের প্রতি তার ব্যক্তিগত মনোযোগের আশ্বাসও দেন। ড. রহমান ইউএনডিপি প্রশাসক আচিম–স্টেইনার এবং জাতিসংঘের শান্তি কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার–সেক্রেটারি–জেনারেল জিন–পিয়ের–ল্যাক্রোইক্সের সঙ্গেও পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এ সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।