‘টেকনাফ, বান্দরবানসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করতেন। এরপর ইসির চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মীদের হাতে তুলে দিতেন।’ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন দালাল নজিব উল্লাহ (৩১)। গতকাল বৃহস্পতিবার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দেন। এর আগে গত ১৪ এপ্রিল বান্দরবানের নিজ বাড়ি থেকে অভিযান চালিয়ে নজিব উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। আলোচিত এনআইডি জালিয়াতির এ ঘটনায় নজীব উল্লাহ মূলত দালাল হিসেবে কাজ করতেন। পূর্বে গ্রেপ্তার একাধিক ইসি কর্মীর আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও নজিব উল্লাহর নাম ছিল। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে- নজিব উল্লাহ ২০১৮ সালের দিকে নগরীর ব্যাটারি গলি এলাকায় থাকলেও জালিয়াতি কাণ্ডে ধরপাকড় শুরু হলে গা ঢাকা দেন। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সঞ্জয় সিনহা আজাদীকে বলেন, ‘এনআইডি জালিয়াতির এ ঘটনায় পূর্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্য থেকে ৫ জন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে তিনজন (ইসির চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অফিস সহায়ক নাজিম উদ্দিন, অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেন ও জয়নাল আবেদীন) নজিব উল্লাহর জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। যার প্রেক্ষিতে আমরা তার সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা চালাই। একপর্যায়ে গোপন খবরের ভিত্তিতে বান্দরবানের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আমরা গ্রেপ্তার করি এবং চট্টগ্রাম নিয়ে আসি।’ তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ২২ আগস্ট লাকী নামের এক নারী চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে এনআইডির স্মার্ট কার্ড তুলতে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, ওই নারী রোহিঙ্গা এবং টাকা দিয়ে এনআইডি করিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরেই টাকার বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ভোটার বানাচ্ছিল এ চক্র। কমপক্ষে ৩ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গার নামে বাংলাদেশি এনআইডি দিয়েছেন তাঁরা। ওই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্তের দায়িত্ব পায়। এ পর্যন্ত সংস্থাটি নজিব উল্লাহসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।