রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কক্সবাজারে আজ থেকে আন্তর্জাতিক সম্মেলন

কাল অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা ।। থাকছেন জাতিসংঘের সংস্থাসহ ৪০ দেশের প্রতিনিধি ।। নিজেদের কষ্টের কথা তুলে ধরবেন রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার , ২৪ আগস্ট, ২০২৫ at ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরতে আজ রোববার কক্সবাজারে বড় পরিসরে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা সম্মেলন। অন্তর্বর্তী সরকারের আয়োজনে তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি, ৪০টি দেশের প্রতিনিধি, ঢাকায় অবস্থিত কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।

এর মধ্যে মিয়ানমারে জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার থমাস এনড্রোস, রোহিঙ্গা বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এমপি ইমরান, জাতিসংঘে মালয়েশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ঢাকার অন্তত ১০ জন রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে থাকবেন।

কক্সবাজারের ইনানীতে পাঁচতারকা হোটেল বে ওয়াচে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর শুরু হবে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা। সংলাপে বিষয়ভিত্তিক পাঁচটি অধিবেশন থাকবে। সেগুলো হলো মানবিক সহায়তা ও তহবিলের চ্যালেঞ্জ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান উন্নয়ন, প্রত্যাবাসনের জন্য আত্মবিশ্বাস তৈরির ব্যবস্থা, নৃশংসতার জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা, টেকসই ও সময়সীমাবদ্ধ সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশল। আগামী ২৬ আগস্ট অংশীজনরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন এবং শরণার্থীদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সরাসরি ধারণা পাবেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রোহিঙ্গা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার মিডিয়া উইংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে তাদের সমস্যা, তাদের আশাআকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্নগুলো তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। একই সাথে অংশ নেয়া ৪০ দেশের প্রতিনিধিদের অবহিতকরণ ও তাদের মতামত প্রকাশ হবে এই সম্মেলনে।

প্রধান উপদেষ্টার মিডিয়া উইংয়ের সূত্র মতে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এ বিষয়ে সরকার বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের সাথে নিবিড় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় পরিসরে তিনটি সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর প্রথমটি কক্সবাজারে হচ্ছে। এই সম্মেলনগুলো আয়োজনের প্রধান উদ্দেশ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরা। এছাড়া এই সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও তহবিলের জন্য একটি বিস্তৃত রোডম্যাপের বিষয়গুলো তুলে ধরতে বাংলাদেশ সরকার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিচার ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের উপায় বের করা। সম্মেলনের প্রধান বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গারা যে গণহত্যার মুখোমুখি হয়েছে, সেটা আন্তর্জাতিক মহলে গিয়ে তাদের বলতে পারাটা বেশ কষ্টকর। সেজন্য কক্সবাজারে ৪০টির মতো দেশের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তাদের সামনে রোহিঙ্গারা তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরবেন।

তিনি জানান, চলতি বছর নিউ ইয়র্ক এবং দোহায় আরও দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সম্মেলনটি আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সবচেয়ে বড় সম্মেলনটি হবে। সেখানে ১৭০টা দেশ অংশ নেবে বলে আশা করছি। এরপর কাতারের রাজধানী দোহায় আরেকটা সম্মেলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন বলেন, আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা সম্মেলনকে ঘিরে জেলা প্রশাসক ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। যদিও সম্মেলনের সবকিছু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন সহযোগী হিসেবে রয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় অনেক ইস্যু ও তদারকিতে থাকবে জেলা প্রশাসন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিআরের ভাষা হলো মার্কাতে ভোট দেবে, এমপি কে হবে কেউ জানবে না
পরবর্তী নিবন্ধমাহে রবিউল আউয়ালকে স্বাগত জানিয়ে নগরীতে আনজুমান ট্রাস্টের শোভাযাত্রা