কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এই দুই সংস্থা এক যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। একই সঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বরাবর এক চিঠিতে এ পদক্ষেপের কথা জানানো হয়। এদিকে এই প্রকল্পে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে গতকাল উখিয়া ও টেকনাফে প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে চাকরিচ্যুতরা।
এতে সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কক্সবাজার–টেকনাফ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন চিঠিতে জানানো হয়, অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। এতে উল্লেখ করা হয়, ক্যাম্পে অবস্থিত শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি অনুকূল হলে পুনরায় চালুর ঘোষণা দেওয়া হবে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন ইউনিসেফের প্রতিনিধি অ্যাঞ্জেলা কার্নে এবং সেভ দ্য চিলড্রেন–এর প্রতিনিধি মো. গোলাম মোস্তফা।
এর আগে গত সোমবার ইউনিসেফ কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান অ্যাঞ্জেলা কার্নে এক সংবাদ সম্মেলনে তহবিল সংকটের কারণে ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষাকেন্দ্র আপাতত জুন মাসের পরে বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছিল। এর ফলে গ্রেড–১ ও ২ শ্রেণিভুক্ত স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষকেরা আর চাকরিতে থাকবেন না। ফলে চাকরি হারাবেন স্থানীয় ১ হাজার ১৭৯ জন শিক্ষক। কার্নে আরও বলেছিলেন, এতে ইংরেজি, বিজ্ঞান ও সামাজিক শিক্ষা শেখানো বন্ধ হয়ে যাবে।
অগ্রাধিকার পাবে বর্মিজ ভাষা, গণিত, জীবন দক্ষতা ও সামাজিক–মানসিক শিক্ষা। এসব পাঠদানে যুক্ত থাকবেন রোহিঙ্গা সমপ্রদায়ের শিক্ষকেরা। ফলে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন এই চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউনিসেফ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ১২ শত স্থানীয় শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়। এসব শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় থেকে শিক্ষকদের চাকরি পুনর্বহাল এবং পর্যাপ্ত তহবিল প্রদানের জন্য জাতিসংঘকে বলা হয়েছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের ফাণ্ডে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা কক্সবাজার–টেকনাফ মহাসড়কে অবরোধ শুরু করে। এর ফলে এই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। দুপুরের দিকে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধকারীরা আন্দোলন স্থগিত করে ।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা অভিযোগ করে জানান, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত এনজিও সংস্থা ব্র্যাক, কোডেক, ফ্রেন্ডশীপ, মুক্তি কক্সবাজার, জেসিএফসহ শিশু শিক্ষা কেন্দ্রেগুলোতে রোহিঙ্গা সেচ্ছাসেবকদের বহাল রেখে ১২৫০ জন বাংলাদেশি শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করে। যা দাতাসংস্থা ইউনিসেফের ফাণ্ড সংকট বলে দাবি করে আসছে।
শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো হঠাৎ করে একযোগে ১২৫০ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করায় স্থানীয়দের মাঝে নেতিবাচক ধারা তৈরি হয়। যা স্থানীয় উখিয়া টেকনাফের মানুষের সাথে ষড়যন্ত্র ও প্রহসন মনে করেন অনেকেই।