কক্সবাজারে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং পুড়ে গেছে রোহিঙ্গাদের ৪৬৯টি ঝুপড়ি বসতি ও তিনটি এনজিও অফিস। এছাড়া আরও অন্তত ১৫০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১টার দিকে উপজেলার কুতুপালং এলাকার লম্বাশিয়া ১–ওয়েস্ট ক্যাম্পের সি–ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। নিহতরা হলেন ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল খায়ের (৬৩) এবং মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে বোরহান উদ্দিন (৬)। এছাড়া আরো চারজন আহত হয়েছেন।
কঙবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপপরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, লম্বাশিয়া ১–ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি বসতঘরে আকস্মিক আগুন লাগে। এতে আগুন ক্যাম্পটির এক থেকে পাঁচ নম্বর সাব ব্লকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে প্রথমে উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে কঙবাজার ও টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের আরও ৫টি ইউনিট যোগ দেয়। দমকল কর্মীদের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা। বেলা পৌনে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন তানহারুল ইসলাম।
বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট অথবা রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ কাজ করছে। উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসাইন জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতা কামাল উদ্দিন বলেন, ওই আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) কার্যালয়ের পাশের একটি রোহিঙ্গা বসতির রান্নাঘরে আগুন জ্বলে ওঠে। ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উড়তে দেখে রোহিঙ্গারা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। কিন্তু উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে ছুটে আসা বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত আশপাশের বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ত্রিপল ও বাঁশের বেড়ার তৈরি ঘরগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো এবং আশ্রয়শিবির ঘনবসতির হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আশ্রয়শিবিরের একটি রোহিঙ্গা বসতি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে অন্যান্য রোহিঙ্গা বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের স্বেচ্ছাসেবীরা তৎপরতা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর সন্ধ্যা নাগাদ পুড়ে যাওয়া বসতিগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে ৪৬৯টি ঝুপড়ি বসতি ও তিনটি এনজিও অফিস পুড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অন্তত ১৫০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি জানান, পুড়ে যাওয়া বসতিগুলোর অন্তত ৩ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় হারিয়েছে। প্রচণ্ড শীতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থায় নেয় তারা। পরে রাতেই যথাসাধ্য গৃহহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত এসব রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।