রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান একই

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে দোরাইস্বামী

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মতো ভারতও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসন চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের উদারতাকে স্বাগত জানান। আমরাও চাই বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের একটি নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারত ও বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পার্থক্য নেই।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। রোহিঙ্গাদের এখানে রাখার জন্য যে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা চমৎকার। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়া বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমরা বুঝি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কী ধরনের আর্থ সামাজিক এবং নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আছে। এই বাস্তুচ্যুত মানুষ শুধু বাংলাদেশের একার চিন্তার বিষয় নয়, এটি আমাদেরও উদ্বেগের বিষয়।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, এটা একদম পরিষ্কার আমরা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসন চাই। সব ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সীমান্তে অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার ৯৫ শতাংশ ঘটে ভারতের সীমান্ত এলাকায়। ৮৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে রাত ১০টার পরে। এ সময় অবৈধ অনুপ্রবেশও ঘটে। এসব ঘটনা বন্ধে সীমান্তে বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চারশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব বাণিজ্যের গেটওয়ে। এর সোনালি অতীত রয়েছে। ভবিষ্যতের হিসেবে অর্থনৈতিক দিক থেকে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেশি।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামস্থ ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী ও ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সালাহ উদ্দিন মো. রেজা। এ সময় রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী সঙ্গীতা দোরাইস্বামী, চট্টগ্রামস্থ ভারতের সহকারী হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব শুভাশীষ সিনহা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক অনেক গভীর উল্লেখ করে দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশ আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ আমাদের সবচেয়ে কাছের। দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সেটি দুই দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যেও বিরাজমান।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে কিছু ইস্যু থাকবে, সেটি স্বাভাবিক। তবে সমপ্রতি দুই দেশের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করেছেন কানেক্টিভিটি, বিজনেস এবং এনার্জি নিয়ে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ক আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হবে। তিনি রাষ্ট্রদূতের কাছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী জাদুঘর করার প্রস্তাব দেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে খাজা বাবার ওরশে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারীদের ভিসা সহজ করারও আহ্বান জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও শনাক্ত ৯৬ দুইজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপ্রশিক্ষিত দক্ষ বিমানবাহিনী গড়ে তোলায় গুরুত্ব প্রধানমন্ত্রীর