পৌষের হাড় কাঁপানো শীতের বিহানে
রোদ পোহানোর উৎসব উৎসব প্রত্যুষ বেলা।
মেলা নয়, উৎসব নয় অথচ উৎসবমুখর
উষ্ণ আবেগের খেলা।
মনে পড়ে যায় জসীমউদদীন এর
“তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়”
নাড়ার আগুন এ পোড়ায়ে
মটরশুঁটি খেয়েছ কি কখনো, গুটি সুটি উষ্ণতা
আর হিমেল হাওয়ায়।
মরিচ পোড়া পান্তায় রোদ পোহায় কৃষাণ বধুর থালা,
নোলক নাড়িয়ে করছে হেসে অমৃত পার্বন পালা।
দূরে ঘোর লাগা পৌষের কুয়াশায় আবছা
আলো আঁধারির কি অপরূপ হাতছানি
শিশির কণা আর বুনো ফুলে ভ্রমরের গুনগুনানি।
সবুজ ঘাসে হলুদ সরষের ফুলের মৌ মৌ সৌরভে
পরশ লাগানো আল বেয়ে রাখাল বাঁজায় বাঁশি ভৈরবে।
এক চিলতে রোদ তাতেই দলবদ্ধ হয়ে চলছে
উষ্ণ ভালোবাসার ভাগাভাগি,
বোষ্টম আর বোষটমী গান ধরেছে মনপাগলের বৈরাগী।
চলছে গালগল্প, হাসাহাসি, সুখ দুঃখের
কত শত কাহিনী কোণাটায় বসে গৃহবধূ বুনছে
নকশীকাঁথায় যাপিত যামিনী।
খোকা খুকু হাতে নিয়ে বই, রোদ পোহায় পিঠে
আর মা বলে ওঠে
পড় ও ও–“রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে
শিশু গণ দাও মন নিজ নিজ পাঠে”।
গাঁও গেরামের এদৃশ্য যে কত মধুর স্মৃতি পটে
সাহেব হয়ে এ কথা অনেকেই ভুলে গেছেন বটে।
এখন দেখি রাস্তার ধারে, রমনায় খোলা মাঠে
পাতা কুড়ানির দল, শীতবস্ত্রহীন অসহায় মানুষ আগুন জ্বালায়
রোদপোহানোর বিকল্পিত এ উৎসব তাদের নিত্য সম্বল।
আর প্রেমিক প্রেমিকার পৌষের রাত যদি হয় অভিসার
তারাও পোহায় আগুন ভালোবাসা জড়ানো উষ্ণতার।
ওম জড়ানো সেই বিহানের রোদ পোহানোর স্বাদ পেয়েছে যারা,
পৌষ এলেই পিঠা পুলির পার্বণ পরে উদাস মনে
সেই স্মৃতি দিবে নাড়া।