আয়-রোজগার বন্ধ। পরিবারের কাছে পাঠাতে পারছেন না টাকা। চোখেমুখে আতংক কিংবা বিভীষিকা। ঠিক কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। পরিবারের সদস্যরা তার দিকে থাকিয়ে আছেন। কখন তিনি তাদের কাছে টাকা পাঠাবেন। যার কথা বলছি তিনি হলেন নুরুল হুদা। পেশায় একজন ভ্যানচালক। করোনার ছোবলে তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিশেষ করে চলমান লকডাউনে তিনি অসহায় প্রায়। শুধু নুরুল হুদা নন; তার মতো এই লকডাউনে আরও অনেকের আয়-রোজগার বন্ধ। কেউ পরিবারকে আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারছেন না।
নুরুল হুদা লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা। বর্তমানে নগরীর চকবাজার লাল চান্দ রোডের একটি গ্যারেজে থাকেন। গ্যারেজের একটি ভ্যান চালিয়ে নিজের খরচ সামলানোর পাশাপাশি পরিবারের কাছেও টাকা পাঠাতেন। গত রোববার দুপুর আড়াইটায় গ্যারেজের সামনে নুরুল হুদা তার ভ্যানের উপর বসে ছিলেন। পায়ের উপর পা তুলে, আকাশের দিকে থাকিয়েই। কি যেন ভাবছেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে কাছে গিয়ে কী খবর জানতে চাইলে হেসে বলেন, সকাল থেকে বসে আছি, রোজগার শূন্য। একটি ভাড়াও পাইনি। সন্ধা পর্যন্ত থাকব, তবে ভাড়া যে আর পাব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, আগের দিন শনিবার মাত্র একটি ভাড়া পেয়েছিলাম। চকবাজার থেকে রাহাত্তারপুল। ওই এক ভাড়ায় ইনকাম হয়েছে ১২০ টাকা। ভ্যানের মালিককে দিয়েছি ২০ টাকা। পরিবারের কথা উল্লেখ করে বলেন, পরিবারের অবস্থা ভালো না। তিন ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী মিলে সদস্য সংখ্যা ৪ জন। তাদের টাকা প্রয়োজন। রমজান মাসে খরচ একটু বেশি। কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই। লকডাউন সময়ে এক টাকাও পাঠাতে পারিনি। অথচ প্রতি সপ্তাহে তাদের কাছে টাকা পাঠাতাম। সুখে শান্তিতেই ছিলাম।
নুরুল হুদার সাথে কথা বলতে বলতে সেখানে হাজির হন মো. রাজ্জাক প্রকাশ রাজ্জাক নামে আরো এক ভ্যান চালক। নুরুল হুদার পাশের জেলা নোয়াখালীতেই তার বাড়ি। পুত্র সন্তানের ঝামেলা না থাকলেও নিজের খরচ সামলাতে টাকা প্রয়োজন। কিন্তু গত চারদিনে তার এক টাকাও আয় হয়নি। জানতে চাইলে অকপটে নিজেই এসব কথা বলে পেলেন। রাজ্জাক বলেন, বিয়ে করেছিলাম, বউ মারা গেছে। ছেলে সন্তানও হয়নি। একা একাই দিন পার করছি। খুব ভালোই ছিলাম। যা আয় হতো তা দিয়ে কোনো রকম দিন চলে যেত। এখন ঝামেলায় পড়ে গেছি। কষ্টে দিন কাটছে খুব আয় রোজগার বন্ধ। চারদিন ধরে এক টাকাও আয় করিনি। বসে বসে অলস সময় পার করছি।
নুরুল হুদা ও রাজ্জাক জানান, তাদের মতো আরও অনেকে আছেন এ গ্যারেজে। সব মিলে ১৫ জনের মতো হবে। যারা সবাই ভ্যান চালক। সবার একই অবস্থা। কারো কোনো আয়-রোজগার নেই। পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন না। কারো কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি উল্লেখ করে তারা আরও জানান, লকডাউন ঘোষণা করায় আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। পকেটে কোনো টাকা নেই। আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না কেউ। কেউ এসে একটি টাকা বা কোনো ত্রাণও দেননি।