চট্টগ্রামে রেলের কোটি কোটি টাকার পুরনো বগি পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়। বছরের পর বছর পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট যেমন হচ্ছে, তেমনি চুরিও হচ্ছে। এতে রেলওয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। ‘খোলা আকাশের নিচে কোটি কোটি টাকার পুরনো বগি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সরেজমিনে গিয়ে আসল চিত্র প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়ের চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই), পাহাড়তলী, মাঝিরঘাট বাংলা বাজার, ষোলশহরসহ বেশ কিছু এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রেলের শত শত পুরনো বগি, পার্সেল বগি, রেলবিটসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ। তবে রেলওয়ের এসব পুরনো বগি মজুদ করে রাখা হলেও এগুলো দেখাশোনার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। যার কারণে এসব বগির মূল্যবান যন্ত্রাংশ প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে। আর এই চুরির সাথে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং রেলওয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন এবং রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির পাশে সিজিপিওয়াই এলাকায় সবচেয়ে বেশি বগি এবং রেলওয়ের যন্ত্রাংশ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। রেলের এসব পুরনো বগিসহ সকল প্রকার যন্ত্রাংশ দেখাশোনা এবং বিক্রি করার দায়িত্বে রয়েছে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলায় কোটি কোটি টাকার রেলের যন্ত্রাংশ চুরির একাধিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রেলওয়ের হালিশহর এলাকায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এরিয়া নিয়ে সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডের অবস্থান। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল) রাজস্ব আয়ের প্রধান মাধ্যম। চট্টগ্রাম বন্দরের রেলওয়ের মাধ্যমে পরিবহনকৃত সমস্ত পণ্য–কন্টেনার–সিজিপিওয়াই ইয়ার্ড হয়ে সারাদেশে যায়। এই ইয়ার্ডের পুরো এলাকাটিই অরক্ষিত। সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডের চারিদিকে সীমানা প্রচীর দেয়ার কথা ছিল কিন্তু এখনো হয়নি বলে জানান, চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের দায়িত্বরত রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এনামুল হক সিকদার। তিনি বলেন, এটি রেলওয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ইয়ার্ড। এখানে আমরা শুধু মালবাহী ট্রেনে পণ্য পরিবহনের বিষয় গুলো দেখি। এখানে রেলওয়ের অনেক পুরনো বগি যন্ত্রাংশ মজুদ রয়েছে। এগুলো রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ দেখে। এছাড়াও এখানে আরএনবি রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সিজিপিওয়াই পুরো ইয়ার্ডে এতো বিপুল সংখ্যক সম্পদ রয়েছে কিন্তু সেই তুলনায় পর্যাপ্ত লোকবল নেই। এতো বিশাল–গুরুত্বপূর্ণ ইয়ার্ডটি চলছে শুধুমাত্র স্বল্প সংখ্যা লোকবল নিয়ে। সীমানা প্রচীর না থাকায় পুরো এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আমরা কেবল শুনি, প্রতি বছর রেলওয়ে লোকসান গোনে। তবু কোটি কোটি টাকার ওই সম্পদের বিষয়ে কোনো উদ্যোগী হচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ। অথচ দরপত্রের মাধ্যমে সেসব বগি বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করার সুযোগ থাকলেও অদৃশ্য সুতোর টানে তা থেমে আছে। ফলে আস্তে আস্তে নষ্ট হচ্ছে সেসব পরিত্যক্ত বগি ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ। তাছাড়া বগিগুলো বছরের পর বছর রেখে দেয়ায় জং ধরে নষ্ট হচ্ছে রেললাইনও। অনেক জায়গায় রেললাইন দেবে গেছে। অভিযোগে প্রকাশ, প্রতিনিয়ত একটি চক্র রেলের এসব বগিসহ যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন এবং রেলওয়ে পুলিশ–আরএনবি কোনো উদ্যোগই নিচ্ছেন না বলে জানান স্টেশনের কর্মকর্তারা।
এ কথা ঠিক যে, সীমানা প্রাচীর না থাকায় রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ইয়ার্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের অনেক কষ্ট হয়। তারপরও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দিন–রাত সমান তালে রেলওয়ের সম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছেন। তবে পাহাড়তলী রেলওয়ে সেইল ডিপো থেকে নিয়মিতই রেলের দামি দামি যন্ত্রাংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে এবং পাচার কাজের সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে। তারপরও থেমে থাকেনি চুরি। প্রতিনিয়তই রেলের এসব পুরনো যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কেননা যন্ত্রাংশ চুরি কিংবা নিরাপত্তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।