রেলের অব্যবস্থাপনা দূর করুন নিশ্চিত করতে হবে স্বচ্ছতা

| সোমবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রহণ করা হয়েছে হরিলুটের উন্নয়ন প্রকল্প। কিন্তু যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইঞ্জিন, কোচসহ রোলিংস্টক সরঞ্জাম ক্রয়ে আগ্রহ ছিল না। যেসব উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতিলুটপাট করা সহজ, তেমন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘টেন্ডার ছাড়াই বেসরকারি খাতে ২৪ ট্রেন, গত এক দশক ধরে এই অবস্থা, বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত রেলওয়ে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।এতে বলা হয়েছে, টেন্ডার ছাড়াই গত এক দশক ধরে বেসরকারি খাতে রেলের ২৪টি ট্রেন পরিচালিত হয়ে আসছে। রেলওয়ে আইন অনুযায়ী চার বছরের জন্য বেসরকারি খাতে ট্রেন পরিচালনার জন্য লিজ দেয়া হয়ে থাকে। এই ২৪টি ট্রেনও প্রাথমিকভাবে চার বছরের জন্য লিজ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু লিজ নেয়ার পর দলীয় প্রভাব বিস্তার করে তারা গত এক দশকের বেশি সময় ধরে নতুন টেন্ডার ছাড়াই চুক্তির সময় বাড়িয়ে ট্রেন পরিচালনা করে আসছে। টেন্ডার ছাড়াই এসব ট্রেন বেসরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ায় বছরের পর বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে রেলওয়ে।

সমপ্রতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে বেসরকারিভাবে পরিচালিত ২৪টি ট্রেনের লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। লিজ নেওয়া ইজারাদারদের বিষয়টি জানাতে রেলপথ মন্ত্রণালয় গত ৩ নভেম্বর রেলওয়ের মহাপরিচালককে চিঠি দেয়। এরপর বেসরকারিভাবে পরিচালিত ২৪টি ট্রেনের লিজ বাতিল করা হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে এই ২৪টি ট্রেন আবার লিজ দেয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে রেলওয়ে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন এবং বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে জানা গেছে, টেন্ডারবিহীন বেসরকারিভাবে পরিচালিত ২৪ ট্রেনের মধ্যে ১০টি ট্রেন পূর্বাঞ্চলের। অবশিষ্ট ১৪টি ট্রেন পশ্চিমাঞ্চলের। সূত্র জানায়, এই ২৪টি ট্রেন বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সালাউদ্দিন রিপন ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল গত এক দশক ধরে। এই কোম্পানিগুলো প্রাথমিকভাবে চার বছরের জন্য ট্রেন পরিচালনার চুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু তারা গত এক দশকের বেশি সময় ধরে নতুন টেন্ডার ছাড়াই চুক্তির সময় বাড়িয়ে ট্রেন পরিচালনা করে আসছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রেলওয়ের কেনাকাটাতেও এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় গত জুনে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দেখা গেছে বাজারের চেয়ে ১৫২০ গুণ বেশি দাম দিয়ে রেলওয়ে নানা যন্ত্রপাতি কিনেছে। শুধু কেনাকাটাতেই নয়, রেলের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতির কারণে প্রায় প্রতিটি প্রকল্পের খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পের খরচ ১০ গুণও বেড়েছে। ২০১০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হওয়ার সময় চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই ২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে প্রকল্প ব্যয় এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। নির্মাণ শুরুর আগেই প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায় ১০ গুণ বা ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। অস্বাভাবিক ব্যয় বাড়ানোর পরও এই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

রেল খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্নীতিমুক্ত সেবা খাত বাস্তবায়নে লোক দেখানো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও গত ১৫ বছরে রেলের দুর্নীতি সামান্য কমানো যায়নি। বরং এ সময়ে তা হু হু করে বেড়েছে। তবে নানা অনিয়মদুর্নীতি তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হয়েছে তারা বরাবরই থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউ কেউ আবার দুর্নীতির মামলায় জেল খেটেও আসীন হয়েছেন রেলের স্বপদে। দলীয় প্রভাব বিস্তার করে বছরের পর বছর এরকম অনিয়ম চালিয়েছিল কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।

রেলের গতি বাড়িয়ে এ খাতকে আধুনিক ও জনবান্ধব করতে বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিলেও বিগত সরকারের আমলে কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। রেলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যাত্রীরা সেসব উদ্যোগের সুফল পাননি। কেন পাননি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। রেলের অভ্যন্তরে যেসব দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে, তা দূর করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬