রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগও বাড়াতে হবে

| শুক্রবার , ২৮ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, ক্রমান্বয়ে অর্থনীতির অপরাপর সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করছে। এ সরকারের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৯.৩২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী জুন মাসের মধ্যে এটি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশা করছি। ২৫ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড গড়েছে, প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আড়াই বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আমাদের দেশের অর্থনীতি গড়ার বীর সৈনিক। তাদের জন্য প্রক্রিয়াগত যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো সহজ করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তারা যেন ভোগান্তির শিকার না হন, দূতাবাস যেন ঠিকমতো কাজ করে, এটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী নির্বাচনে যেন তাদের ভোটাধিকার দিতে পারি সেজন্য কাজ করছি।

বলা বাহুল্য যে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎস রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়। চলতি অর্থবছরে এ দুই খাতেই বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। আর ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে রফতানি আয়ে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান এ দুই উৎসের উচ্চ প্রবৃদ্ধিতেও রিজার্ভ বাড়ছে না দেশে। আট মাস ধরে রিজার্ভের পরিমাণ ওঠানামা করছে ১৯ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। উল্লেখ করতে পারি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিও। এটি দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ঈদ সামনে রেখে দ্রুত বাড়ছে রেমিট্যান্স। ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। ব্যাংকসংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে মার্চে প্রবাসী আয়ের ইতিহাস সৃষ্টি হবে। জানা গেছে, চলতি মাসের ২২ দিনেই ২৪৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে যার পরিমাণ ২৯ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন আসছে ১১ কোটি ডলার করে। সবকিছু ঠিক থাকলে মার্চে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে পরিবারপরিজনের বাড়তি খরচ মেটাতে বেশি বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ কারণে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো খুব ভালো অবস্থানে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটা সত্যিই সুসংবাদ বটে।

পরিসংখ্যান বলেছে, গত ১৩ মার্চ দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৭৩ কোটি বা ১৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১ জুলাই রিজার্ভের পরিমাণ ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার ছিল। সে হিসাবে গত আট মাসে রিজার্ভ না বেড়ে উল্টো ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার কমেছে। যদিও এ সময়ে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় এসেছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বেশি। এর মধ্যে গত অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর রফতানি আয় বেশি এসেছে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়লেও মূলত প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই), বিদেশী অনুদান এবং মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণ কমে যাওয়ার প্রভাবেই দেশের রিজার্ভ চাপে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালান্স অব পেমেন্ট (বিওপি) তথা দেশের সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২৪২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাইজানুয়ারি) দেশে এফডিআই প্রবাহ কমেছে ৬৫ কোটি ডলার। একই সময়ে অনুদান (ফরেন এইড) আসা কমেছে ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন বা ১২২ কোটি ডলার। আর মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণ কম এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে এ সময় দেশে এফডিআই প্রবাহ, বিদেশী অনুদান এবং মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কম এসেছে ৩১৪ কোটি ৩ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশে আমদানি বেড়েছে ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন বা ১২২ কোটি ডলারের।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কেবল রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে নেয়া যাবে না। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে অবশ্যই বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগও বাড়াতে হবে। যেকোনো দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান শর্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু এ দুটি উপাদানই এ মুহূর্তে বাংলাদেশে অনুপস্থিত। এজন্য সুস্থির পরিবেশ জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে