রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও তা ধরে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে

| বুধবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছেছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এ মাসের শুরুতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) পেমেন্টের পর থেকেই নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল রিজার্ভ। গত বুধবার রিজার্ভ কমে ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছিল। জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের আমদানি বিলের দায় বাবদ ১৬৭ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নামে। এরপর গত বুধবার আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ আরও কমে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার হয়। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, গত সোমবার বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।

প্রসঙ্গত, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার নয়টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানিরপ্তানি হয়, তার মূল্য প্রতি দুই মাস পর নিষ্পত্তি করা হয় এর মাধ্যমে।

আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছেবাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানিরপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কয়েক বছর ধরেই স্মরণকালের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা, ডলার সংকট, রিজার্ভের ক্ষয়, বিনিয়োগ খরা, রাজস্ব ঘাটতি, ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও অনিয়মদুর্নীতি, বিদ্যুৎজ্বালানি খাতের লুটপাট, অব্যবস্থাপনাসহ অর্থনীতি বিভিন্ন সংকটে নিমজ্জমান। গত বছরের আগস্টের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর বিভিন্ন খাতে অস্থিরতা বাড়তে থাকে। তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে থাকে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এত দিন পর্যন্ত বেশকিছু বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা পেয়েছে। বাণিজ্য ও অনুদানের ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতি মিলবে আগামী বছরের নভেম্বরে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর যেমন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে তেমনি সুযোগও তৈরি হবে। তখন আগের পাওয়া সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে না এবং আরো শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা করতে হবে। শুধু পোশাক শিল্পের ওপর নিভর্র না করে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও রফতানি পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ অর্থনীতিকে আরো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডিপি) তিনটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে। সেগুলো হলো মাথাপিছু আয়, জনসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্‌গুরতা সূচক। বিশ্লেষকরা বলেন, দেশের সামপ্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ উত্তরণ অবশ্যই চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার। তবে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে অনেক ধরনের সুবিধাপ্রাপ্ত হয়। এক. শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা। দুই. বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, নানা ধরনের ছাড়, দীর্ঘ বাস্তবায়ন কাল ইত্যাদি। তিন. আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতা। চার. বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সাহায্য। তাছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের জন্য জাতিসংঘে চাঁদার পরিমাণ অনেক কম থাকে, সেটা আর থাকবে না। আইএলও ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ হারে বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এই বাস্তবতায় দেশের তরুণদের এই অভ্যুত্থান তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন।

অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থান সেভাবে হয়নি। তাঁদের ভাষ্যমতে, এটা হলো কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি। তাই বিদ্যমান বাস্তবতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সবচেয়ে বড় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তা না হলে বঞ্চনা ও প্রতারিত হওয়ার বোধ তরুণদের বুকের মধ্যে আগের মতোই ধিকিধিকি জ্বলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং তা ধরে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে