রেমিটেন্স বাড়তে পারে ৮ শতাংশ যেসব কারণে বাড়ছে

আগের পূর্বাভাস থেকে সরে এল বিশ্ব ব্যাংক

| রবিবার , ১ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারী শুরুর পরপর চলতি বছরে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) গত বছরের প্রায় চার ভাগের একভাগ কমবে বলে আগের দেওয়া পূর্বাভাস থেকে সরে এসেছে বিশ্ব ব্যাংক। মহামারীর ছয় মাস পর বিশ্বের আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালে ৮ শতাংশ বেড়ে বাংলাদেশে ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসতে পারে। শুক্রবার বিশ্ব রেমিটেন্স পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস থ্রো মাইগ্রেশন লেন্স’ শীর্ষক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে এপ্রিলের শুরুতে কোভিড-১৯ এর কারণে এ বছর বাংলাদেশে রেমিটেন্স ২২ শতাংশ কমে ১৪ বিলিয়ন ডলারে নামতে পারে বলে ধারণা দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। তবে হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীর কারণে বেশিরভাগ দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে ধস নামলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে বাংলাদেশে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ শতাংশ। এটা আরও বেড়ে ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজের।
প্রবাসী আয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, মেঙিকো ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিবর্তিত পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মেক্সিকোর ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে পেসোর অবম্যূলায়ন এবং পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ‘হজ বন্ধের প্রভাব’ ও কর মওকুফকে রেমিটেন্স বাড়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদের ক্ষেত্রে ‘হজ বন্ধের প্রভাব’ ছাড়াও রেমিটেন্স বাড়ার পেছনে আরও বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছে বিশ্ব ব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশের মুসলিম প্রবাসীরা হজের জন্য টাকা জমিয়ে রাখেন। কিন্তু মহামারীর কারণে এবার হজ বন্ধ থাকায় তারা সেই টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধির পেছনে বন্যাকেও গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখছে বিশ্ব ব্যাংক। প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ও ৪৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের প্রবাসী স্বজন বেশি টাকা পাঠিয়েছেন। মহামারীর মধ্যে এপ্রিল-জুন সময়ে শাটডাউনের কারণে অর্থ জমে যাওয়া ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনানুষ্ঠানিক (হাতে হাতে বহন) থেকে আনুষ্ঠানিক বৈধ পথে (ব্যাংকের মাধ্যমে) অর্থ আসাকেও রেমিটেন্স বাড়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দেখছে বিশ্ব ব্যাংক।
এছাড়া বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠালে সরকার যে ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, প্রবৃদ্ধিতে তারও ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) প্রায় সোয়া ৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। আর এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত এক মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশ। এর আগে এই মহামারীর মধ্যেই গত জুলাই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, আমার বিশ্বাস, রেমিটেন্স বৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কেননা, বৈধ পথে রেমিটেন্স আনতে আমরা গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছি। এছাড়া রেমিটেন্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে লেকে গোসল করতে নেমে লাশ হল পর্যটক
পরবর্তী নিবন্ধফানুসের মতো পাপও উড়ে যাবে আকাশে