ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ২শ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২ লাখ মানুষ। দুইদিনের বৃষ্টিপাতে থমকে রয়েছে জনজীবন। পর্যটন শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপ–সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে কয়েক শ দোকানপাটের মালামাল নষ্ট হয়েছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে সৈকতে হোটেল মোটেল জোনের ১৮টি সড়ক ডুবে গেছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলের কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। অধিকাংশ পর্যটক অবস্থান করছেন হোটেল কক্ষে। আবার অনেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটছেন সাগরে। সাগরে লোনা জলে গা ভাসাচ্ছেন অনেকেই।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কক্সবাজারে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা ২০১৫ সালের পর একদিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এতে পাহাড় ধস এবং বন্যার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারী বর্ষণ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। এরপর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণ শহরের মানুষের কর্মজীবন অনেকটাই থামিয়ে দেয়। শহরের ব্যস্ততম পাঁচ কিলোমিটারের প্রধান সড়কও পানিতে ডুবেছে। সড়কের কলাতলী, সুগন্ধা, বাজারঘাটা, বড়বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদীঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়ার কয়েক শ দোকান, অফিস, আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি জমে আছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণ হলেই হোটেল মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন পর্যটকরা দুর্ভোগে পড়েন, ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করে। পাহাড় কাটার মাটি নেমে এসে নালা ভরাট হওয়ায় বৃষ্টির পানি দ্রুত সাগর নদীতে নেমে যেতে পারে না। তাই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। গত জুলাই মাসেও কয়েক দফায় ভারী বর্ষণ হয়েছিল। তখনো শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল। শহরের তারাবনিয়াছড়ার বাসিন্দা আইনজীবী রমিজ আহমদ বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পৌরসভার মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর আত্মগোপনে যান। শহরের ময়লা আবর্জনায় নালা নর্দমা ভরে আছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি নালা দিয়ে নেমে যেতে পারছে না বলেই শহরজুড়ে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।
সদরের ঝিলংজা, উপজেলা গেইট, বাংলাবাজার, মোক্তারকুল, ডিককুল এবং পিএমখালীর নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি, খুনিয়া পালং, উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং, জালিয়া পালং, রত্না পালং রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নে অন্তত ৪০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। হলদিয়া পালং, জালিয়া পালং, রত্না পালং রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নে ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
উখিয়ার শরীফ আজাদ বলেন, এসব এলাকার আমন চাষাবাদ, ফসল ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তীব্র ঝড়ো বাতাসে কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়েছে। পুকুর ও মৎস্য চাষে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এখনো সরকারিভাবে কোন সহায়তা পানিবন্দি এলাকায় পৌঁছেনি।
কক্সবাজারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, শুক্রবার সকালে ঝিলংজায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত তিন জনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম মাঠে নেমেছে।