দারুণ জমে উঠেছিল ওভাল টেস্ট। চতুর্থ দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারতো টেস্ট ম্যাচটি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে হতে পারেনি। শেষ দিনের জন্যই যেন সব উত্তেজনা জমা হয়েছিল। যদিও শেষ দিনের প্রথম ওভারেই পরপর দুইটি চার মেরে উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছেলন ইংলিশ ব্যাটার ওভারটেন। ইংলিশদের জয়ের জন্য তখন দরকার মাত্র ১৯ রান। কিন্তু তখন থেকে বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ সিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৬ রানের বিস্ময়কর হার মানতে হলো ইংল্যান্ডকে। জয়ের জন্য তখন দরকার মাত্র ৭ রান। কিন্তু সিরাজের করা ইয়র্কার লেংথের বলের জবাব খুঁজে পেলেন না গাস অ্যাটকিনসন। অফ স্টাম্প উপড়ে ফেলে খানিকটা ছুটে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আইকনিক উদযাপনে মাতলেন বোলার মোহাম্মদ সিরাজ। আগের দিন হ্যারি ব্রুকের ‘ক্যাচ’ মুঠোয় জমিয়েও বাউন্ডারি লাইনে পা ঠেকিয়ে ফেলা পেসার প্রায়শ্চিত্ত করলেন শেষ দিনে দলকে জিতিয়ে। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের মুঠো থেকে জয় বের করে নিয়ে সমতায় সিরিজ শেষ করল ভারত। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ সিরিজের শেষটাও হলো স্মরণীয়। অ্যান্ডারসন–টেন্ডুলকার ট্রফির ওভাল টেস্টে ভারত জিতল ৬ রানে। পাঁচ টেস্টের সিরিজ শেষ হলো ২–২ সমতায়। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সবচেয়ে কম রানে জয় এটিই। ২০০৪ সালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩ রানে জিতেছিল তারা। জয়ের জন্য গতকাল সোমবার শেষ দিন ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। ভারতের ৪ উইকেট। ভাঙা কাঁধ নিয়ে এক হাতে ব্যাটিংয়ে নামা ক্রিস ওকসের সঙ্গে শেষ জুটিতে চেষ্টা করেন অ্যাটকিনসন, কিন্তু অল্পের জন্য পারলেন না তিনি। ভারতের অবিশ্বাস্য এই জয়ের নায়ক সিরাজ। শেষ দিনে তিনটিসহ ইনিংসে তার শিকার ৫ উইকেট। ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে ‘ম্যান অব দা ম্যাচ’ তিনিই। পাঁচ টেস্টের সবকটিতে খেলে সিরিজের সর্বোচ্চ ২৩ উইকেটও তার। সিরাজ নায়ক হলে পার্শ্বনায়ক আরেক পেসার প্রাসিধ কৃষ্ণা। দুই ইনিংসেই চারটি করে ম্যাচে তার প্রাপ্তি ৮ উইকেট। ইংল্যান্ডের জন্য শেষ দিনের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। দিনের প্রথম বলে প্রাসিধকে পুল করে চার মারেন জেমি ওভারটন। পরের বল তার ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি হয়ে যায় উইকেটের পেছনে দিয়ে। পরের ওভারে জেমি স্মিথকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান সিরাজ। পরের বলে অল্পের জন্য আরেকটি উইকেট পাননি তিনি। অ্যাটকিনসনের ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল অল্পের জন্য স্লিপে লোকেশ রাহুলের মুঠোয় যায়নি। সিরাজ নিজের পরের ওভারে এলবিডব্লিউ করে ফেরান ওভারটনকেও। এরপর প্রাসিধের বলে জশ টংকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার আহসান রাজা। তবে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন টং। রিপ্লেতে দেখা যায় বল স্টাম্প মিস করে যেত। নিজের পরের ওভারে এসেই টংকে বোল্ড করে দেন প্রাসিধ। তখনও ইংল্যান্ডের দরকার ১৭ রান। এরপরই স্লিংয়ে ঝুলিয়ে রাখা বাঁ হাত সোয়েটারের ভেতরে ঢেকে রেখে, আরেক হাতে ব্যাট নিয়ে ওকস ২২ গজে নামেন দর্শকদের তুমুল করতালির মাঝে। সিরাজকে ছক্কায় উড়িয়ে ব্যবধান কমিয়ে আনেন অ্যাটকিনসন। ওভারের শেষ বলে ‘বাই’ থেকে রান নিয়ে স্ট্রাইকও ধরে রাখেন তিনি। পরের ওভারে প্রথম বলে দুই রান নেওয়ার পর শেষ বলে এক রান নিয়ে ফের একই কাজ করেন তিনি। এরপরই শেষের সেই মুহূর্ত। পরের ওভারে প্রথম বলে অ্যাটকিনসনকে (২৯ বলে ১৭) বোল্ড করে রোমাঞ্চকর ম্যাচের ইতি টেনে দেন সিরাজ। ওকসকে কোনো বল খেলতে হয়নি। ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ। যৌথভাবে সিরিজ সেরা হয়েছেন হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড) এবং শুবমান গিল (ভারত)