আবারো এক প্ল্যাটফরমে আসছে লাইটার মালিকদের তিনটি সংগঠন!
আজাদী প্রতিবেদন
অবশেষে আবারো একই প্ল্যাটফরমে আসছে লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন। আগের মতো ডব্লিউটিসির নিয়ন্ত্রণেই লাইটারেজ জাহাজ চলাচলের ব্যাপারে গতকাল বিবদমান দুইপক্ষ বৈঠকে বসেছে। বৈঠকে উভয়পক্ষ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে। তবে গতকালের বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামীকাল মঙ্গলবার আবারো বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
আইভোয়াক বলেছে, ডব্লিউটিসি আমাদেরকে এক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। অপরদিকে ডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুধু আইভোয়াকই নয়, আমরা সবাইকে একসাথে নিয়ে জাহাজ চালানোর আহ্বান জানিয়েছি।
দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে চলাচলকারী লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন রয়েছে। বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (বিসিভোয়া), কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (কোয়াব) এবং ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) নামের এই তিনটি সংগঠনের সদস্যদের মালিকানাধীন জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙর থেকে বছরে অন্তত দশ কোটি টন পণ্য পরিবহন করে থাকে। তিনটি সংগঠনের আওতাধীন প্রায় ১৮শ’ লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। এই তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল বা ডব্লিউটিসি অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। অভ্যন্তরীণ বিরোধে ডব্লিউটিসি থেকে ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) বের হয়ে আলাদা সেল গঠন করলে বিরোধ তুঙ্গে উঠে। দুইটি পৃথক সেল থেকে জাহাজ সিরিয়াল দেওয়া হচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে বিশৃংখলা তৈরি হলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দফতরে বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে চট্টগ্রামস্থ নৌ বাণিজ্য দফতরের মূখ্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি সেল গঠন করে দেয়া হয়। বলা হয়, এই সেলের নিয়ন্ত্রণে এবং মনিটরিংয়ে জাহাজ পরিচালিত হবে। কিন্তু সেলটি নানাভাবে উদ্যোগ এবং কর্মপন্থা ঠিক করলেও গতকাল পর্যন্ত সব লাইটারেজ জাহাজ একই সিরিয়ালে চলাচল শুরু হয়নি।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল বিবদমান দুইপক্ষকে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই হোটেলের একটি স্যুটে উভয়পক্ষ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। বৈঠকে ডব্লিউটিসির উপদেষ্টা মুনির চৌধুরী, কনভেনর মোহাম্মদ নুরুল হক, তৌহিদুল আনোয়ার, আ ক ম শামসুজ্জামান রাসেল, শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এবং ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী সফিক আহমেদ ও মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উভয়পক্ষ মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সব ধরনের বিভেদ ভুলে আবারো ডব্লিউটিসির ব্যানারে জাহাজ পরিচালনার ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছার চেষ্টা করা হয়। ডব্লিউটিসি পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো সমস্যা থাকলে এর সাথে অন্য কিছু লাগিয়ে নামে সামান্য পরিবর্তন এনে চালানোর ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়। আইভোয়াকের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি–দাওয়া এবং ডব্লিউটিসির উত্থাপিত সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকার পাওনার ব্যাপারটি নিয়েও আলোচনা হয় এবং সবকিছু সুষ্ঠু ও সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি পন্থায় নিরসন করার ব্যাপারেও উভয়পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছার চেষ্টা করছে। তবে গতকাল বেলা দেড়টা পর্যন্ত বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে নৌ বাণিজ্য দফতরের মূখ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে একই সিরিয়ালে জাহাজ পরিচালনার জন্য গত মধ্যরাতে সর্বশেষ ডেটলাইন বেঁধে দেয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারে আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ বলেন, আমরা বসেছিলাম। বিসিভোয়া থেকে আমাদেরকে বসার আহ্বান জানানো হয়। আমরা বসি। কথাবার্তা বলি। কিভাবে বা কোন শর্তে আমরা আবারো একই সাথে চলতে পারি তার প্রস্তাবনা দিতে বলেছি। ওনারা প্রস্তাবনা দিলে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো বলে জানিয়েছি।
এই ব্যাপারে ডব্লিউটিসির কনভেনর মোহাম্মদ নুরুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডব্লিউটিসি সব জাহাজ মালিকদের সংগঠন। আমি সেই সংগঠনের কনভেনর। আমি কনভেনর হিসেবে সবাইকে নিয়ে একসাথে চলার আহ্বান জানাতেই পারি। তিনি বলেন, বৈঠকে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি ডায়ালগ ওপেন হয়েছে। এটি নিশ্চয় ভালো কিছু বয়ে আনবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।