রুডল্ফ ক্রিস্টফ ইউকেন (১৮৪৬–১৯২৬)। জার্মান দার্শনিক, সাহিত্যিক এবং শিক্ষক। মানবিক উৎকর্ষ ও জীবনকে নব আদর্শে উপস্থাপনের জন্য তিনি ১৯০৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রুডল্ফ ক্রিস্টফ ইউকেন ১৮৪৬ সালের ৫ জানুয়ারি জার্মানির অরিখ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই বাবাকে হারান। তার প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পন্ন হয় জার্মানির গ্যোটিঙেনে। প্রাথমিক অধ্যয়ন শেষে গ্যোটিঙেন ও বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার পড়াশোনার বিষয় ছিল দর্শন এবং তার প্রিয় দার্শনিক ধারা ছিল এরিস্টটল–এর দর্শন। তিনি সুইজারল্যান্ডের বাসেল এবং জার্মানির জেনাতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়দ্বয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বাসেলে শিক্ষকতা করেছেন ১৮৭১ থেকে ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত আর জেনাতে ১৮৭৪ থেকে ১৯২০ সাল অর্থাৎ তার শেষ বয়স অবধি। এছাড়া তিনি ১৯১৪ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯২২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এঙচেঞ্জ অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি পুরাতন দার্শনিক চিন্তাধারার ব্যাখ্যা করা ছাড়াও নিজম্ব দার্শনিক চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যাকে বলা হয় ‘এথিক্যাল একটিভিজ্ম’। তার রচনাতেই মূলত দর্শনের এই নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অয়কেনের দর্শন বিষয়ক অন্যতম বিখ্যাত বইয়ের ইংরেজি নাম ‘হিস্ট্রি অফ ফিলোসফিক্যাল টার্ম’। এই গ্রন্থ রচনা করেই তিনি সবচেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন। ইউকেনের সাহিত্যে জীবন দর্শন ছিল মুখ্য। তার দৃষ্টিতে জীবন কেমন তা বেশ ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। তার লেখায় ব্যক্তিত্বের আদর্শ ও মূল্যায়ন ছিল সুস্পষ্ট। বিমূর্ত বুদ্ধিবৃত্তি এবং সাংশ্রয়িক বিদ্যাকে অবিশ্বাস করে ইউকেন কেবল প্রকৃত মানবীয় অভিজ্ঞতার উপর তার দর্শনকে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, মানুষ প্রকৃতি ও আত্মার মিলনস্থল; তার মধ্যে আত্মাবহির্ভূত যে সকল বস্তুবাদী সত্তা রয়েছে তা অতিক্রম করা তারই দায়িত্ব। আত্মীক তথা আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য সংগ্রাম করার মাধ্যমেই সেটি সম্ভব। তিনি প্রকৃতিবাদী দর্শনের তীব্র সমালোচনা করতেন। তিনি বলতেন, মানুষের আত্মা প্রকৃতির অন্যান্য বিষয়াদি থেকে পৃথক হয়ে এবং কেবল প্রাকৃতিক বস্তু ও বিষয়াদির সূত্র ধরে আত্মাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। রুডল্ফ ইউকেন ১৯২৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ৮০ বছর বয়সে জার্মানির জেনা শহরে মৃত্যুবরণ করেন।