বিশ্বকাপ ট্রফিতো অনেক বড়। আন্তঃমহাদেশীয় কোন ট্রফি জিতেও বিজয়ী বীররা যখন দেশে ফিরে তখন ছাদ খোলা বাসে করে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। অবশ্য বিজয়ী দলরাই করে। তবে সে রীতি ভাঙল এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার। শুধু রীতিই ভাঙেনি। কাতারের আমির শেখ তামিমও যোগ দিয়েছেন আর্জেন্টিনা দলের জন্য আয়োজিত সেই আনন্দ শোভা যাত্রায়। এমনিতেই এবারের বিশ্বকাপে অনেক রীতিই ভেঙেছে কাতার।
কত কিছুইতো বাদ দিয়েছে বিশ্বকাপের আয়োজন থেকে। যার কারণে পশ্চিমারা বেশ ক্ষেপেছিল কাতারের উপর। কিন্তু সে সবের কোন তোয়াক্কা করেনি কাতার। এগিয়ে চলেছে নিজস্ব গতিতে। নিজস্ব রীতিতে, নিজস্ব ঐতিহ্যে। আর সে ধারাবাহিকতায় এবারে বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টিনার জন্য কাতার নিজেদের পক্ষ থেকেই ছাদ খোলা বাসের আয়োজন রাখা হয়েছিল।
আর সে বাস ঘুরেছে দোহা শহর জুড়ে। গত ১৮ ডিসেম্বর ছিল কাতারের জাতীয় দিবস। এমনিতেই আরব দেশ গুলো তাদের জাতীয় দিবস গুলো বেশ জমকালোভাবে পালন করে। কাতারের জাতীয় দিবসের সাথে বিশ্বকাপের ফাইনাল যোগ হওয়ায় আরবদের আনন্দের যেন শেষ ছিল না। এমন মহা মিলনতো আর সহসা মিলে না। তাইতো এমন উপলক্ষ্যকে হেলায় হারাতে চায়নি কাতার। সব আনন্দ আর উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। আর সে উপলক্ষে কাতারের আমির শেখ তামিমও যোগ দিলেন আর প্রাণ ভরে উদযাপন করলেন।
আগে থেকেই আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের জন্য চ্যাম্পিয়ন লেখা ছাদ খোলা দুটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু ফ্রান্স পারেনি সে বাসে উঠতে। মেসিরা উঠে গেছেন বিশ্বকাপ জিতে। বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা শেষ হওয়ার পর নানা আনুষ্ঠানিকতা সারতে রাত ১২টা পার হয়ে যায়। কাতারের জাতীয় দিবস পেরিয়ে গেছে একদিন। কিন্তু তাতে কি। আনন্দতো আর এক রাতে শেষ হতে পারে না। তাই উৎসব চলল অনেক রাত পর্যন্ত।
স্টেডিয়াম থেকে আর্জেন্টিনা দলকে বের করে যখন তোলা হয় ছাদ খোলা বাসে তখন হাজার হাজার সমর্থক ঘিরে রেখেছে পুরো এলাকা। বাসের ছাদে উঠে মেসি, মার্টিনেস, ডি মারিয়া, আরভারেস, মলিনারাও যেন আনন্দে আত্মহারা। এ যেন একসাথে অনেক আনন্দের দারুন এক প্যাকেজ। স্বপ্নের সোনালী বিশ্বকাপ হাতে মেসিরা যখন দোহা শহর প্রদক্ষিণ করছিল তখন তাদের সামনে বিশাল বহর। উঠ, ঘোড়া নিয়ে কাতার পুলিশ এবং বিভিন্ন বাহিনী দুরন্ত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল বিশ্বজয়ী আর্জেন্টাইন বীরদের। দোহা থেকে বুয়েন্স আয়ার্সের দূরত্ব ১৩ হাজার ৮০ কিলোমিটার। সেখানে পৌঁছাতে হয়তো আরো সময় লাগবে মেসিদের। তাই বলে হতাশ হওয়ারতো কোন কারণ নেই। কাতার যে সবকিছু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিজয়ী বীরদের অভিবাদন জানাতে।
কাতারের জাতীয় দিবস এবং বিশ্বকাপের ফাইনাল মিলিয়ে দারুন একটি দিনে পরিণত হয় ১৮ ডিসেম্বর। তাই আনন্দটাকে বাড়িয়ে নিলেন কাতারের আমির। গত এক মাসেরও বেশি সময় যারা নানাভাবে ত্যাগ করেছে দেশের জন্য, বিশ্বকাপের জন্য। তাদের জন্য যেন এই বাড়তি আয়োজন। বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একবার চমকে দিয়েছিল কাতার। সমাপনীতে আরো একবার চমকে দিল মাত্র ১৫ মিনিটের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। আর এরকটি চমক দিল বিজীয়দের ছাদ খোলা বাসে সংবর্ধিত করে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরপরই এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ৩২ টি দলের বিশাল জার্সি, এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে করা হয় আনন্দ র্যালি।
যা এবারের বিশ্বকাপে বাড়তি সংযোজন। ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর। এই দীর্ঘ পথ চলায় কাতার যে শুধু বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে তা কিন্তু নয়। বরং অনেক কিছুই দেখিয়েছে বিশ্বকে। সবচাইতে অটুট লক্ষ্য আর হৃদয় ভরা বিশ্বাস নিয়ে কিভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় সেটাই যেন দেখিয়ে দিল কাতার। বিশ্বকাপের বিশ্বসেরা এই আয়োজনের শেষটাও যে এভাবে রাঙানো যায় সেটাও দেখিয়ে দিয়ে নতুন আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করল কাতার। তাইতো আর্জেন্টিনা শুধু যে কাতার থেকে বিশ্বকাপটা নিয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। বস্তা ভর্তি টাকার পাশাপাশি হৃদয় উজাড় করা ভালবাসাও নিয়ে ফিরছে বুয়েন্স আয়ার্সে।