রিশাদের কীর্তি, জয়ে ফিরল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ at ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আরব আমিরাতে আফগানদের কাছে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া মিরাজের দল দেশে ফিরে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিল। সেই হতাশা আর চারপাশে নেতিবাচকতার হাওয়ার মাঝেই আবারো ঘুরে দাঁড়ালো তারা, উল্লাসে মাতিয়ে তুললো দর্শকদের। মিরপুর শেরবাংলা স্টেডিয়ামের উপস্থিত দশ হাজার দর্শককে আনন্দে ভাসিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হারালো ৭৪ রানের বড় ব্যবধানে। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশ ২০৭ রান করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩৩ রানে অলআউট হয়ে যায়। রিশাদ হোসেনের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

শেরবাংলার কালো টার্নিং উইকেটে বাংলাদেশের রান যখন দুইশ হওয়া নিয়ে টানাটানি ঠিক তখন রিশাদ ব্যাট হাতে খেলেন ১৩ বলে ২৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। পরে বল হাতে শিকার করেন ৩৫ রানে ৬ উইকেট। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ৫ উইকেটের স্বাদ পাওয়া প্রথম ডানহাতি স্পিনার তিনি। স্পিন বোলিংয়ে ৬ উইকেটের কীর্তি আগে ছিল না এদেশের কোনো স্পিনারের। ক্যারিয়ারের আগের ১১ ওয়ানডেতে এক ম্যাচে দুই উইকেটের বেশি পাননি তিনি। ম্যাচের আগে তুমুল কৌতূহল ছিল কালো রঙয়ের উইকেট নিয়ে। ম্যাচের শুরুর দিকে পেসারদের বলে বাউন্স ভালোই ছিল উইকেটে। তবে প্রথম ১০ ওভারেই স্পিনারদের বল টার্ন করা শুরু করে অনেকটা। ম্যাচের বাকি সময়টাতেও স্পিনাররা টার্ন পেয়েছেন অনেক। বাউন্স খুব নিচু হয়নি, তবে বল গ্রিপও করেছে বেশ। সব মিলিয়ে ব্যাটসম্যানদের কাজ ছিল কঠিন। সেখানে ম্যাচের একমাত্র ফিফটি করেন হৃদয়। অভিষেকে ৪৬ রানের ইনিংস আসে মাহিদুল ইসলামের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ তোলে ২০৭ রান। রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের শুরুটা ভালো হলেও রিশাদের স্পিনে এলোমেলো যায় তাদের ব্যাটিং লাইন আপ। ১১ ওভার আগেই গুটিয়ে যায় তারা ১৩৩ রানে। একপর্যায়ে তাদের রান ছিল ১ উইকেটে ৭৯। সেখান থেকে ৫৪ রানের মধ্যে হারায় তারা ৯ উইকেট।

মিরপুরে গতকাল শনিবার টস হেরে আগে ব্যাটিং পেয়ে খুশিই ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে তার হাসি দ্রুতই মিলিয়ে যায় ওপেনারদের ব্যর্থতায়। সামপ্রতিক সময়ের ভরসা সাইফ হাসান () বিদায় নেন দ্বিতীয় ওভারেই। পরের ওভারেই আলগা শটে ফিরে যান ১০ মাস পর ওয়ানডেতে ফেরা সৌম্য সরকার ()। নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় শুরুতে বাউন্ডারি পেলেও এরপর মন দেন উইকেট আঁকড়ে রাখায়। প্রথম ৫ ওভারে ২৫ রান তোলা দলের পরের ২৫ রান করতে লেগে যায় আরও ১০ ওভারের বেশি। ষষ্ঠ থেকে ২১তম ওভারের মধ্যে বাউন্ডারি আসে স্রেফ একটি। মন্থর শুরু যখন পুষিয়ে দেওয়ার পালা, শান্ত তখন বিদায় নেন ৬৩ বলে ৩২ রান করে। এই জুটির ৭১ রান আসে ১২০ বলে।

অভিষিক্ত মাহিদুল ক্রিজে যাওয়ার পর রানের গতি কমে যায় আরও। রান বের করার পথই পাচ্ছিলেন না তিনি। আরেক পাশে হৃদয়ও পারছিলেন না সেভাবে ডানা মেলতে। আবার দীর্ঘ সময়ের জন্য উধাও হয়ে যায় বাউন্ডারি। ৮৭ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পরই হৃদয় আউট হয়ে যান জাস্টিন গ্রেভসের অনেক বাইরের বল তাড়া করে। প্রথম বাউন্ডারির আগে মাহিদুলের রান ছিল ৪৬ বলে ১৬। পরে একটু গতি বাড়াতে পারেন তিনি। মিরাজের শুরুটা সাবলিল হলেও থেমে যান ১৭ রানে। অনেকটা সময় ধৈর্য ধরে ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে খেই হারান মাহিদুল। রোস্টন চেইসকে স্লগ করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান তিনি ৭৬ বলে ৪৬ করে। এরপর নুরুল হাসান সোহান () দ্রুত ফিরলে আবার একটু বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে রিশাদের ক্যামিও দলকে নিয়ে যায় দুইশর কাছে। দুটি ছক্কা মারেন তিনি গ্রেভস ও জেডেন সিলসের বলে। শেষ ওভারে তানভির ইসলামের ছক্কায় দুইশ পেরিয়ে যায় দল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভার মেডেন নেন তাসকিন আহমেদ ও তানভির ইসলাম। দুই ওভারের খরার পর দুই ওভারের বর্ষণে রান আসে ২৮। তাসকিনের ওভারে চার ও ছক্কা মারেন ব্র্যান্ডন কিং। তানভিরকে তিন চার এক ছক্কা মারেন আলিক আথানেজ। রানের গতিতে এরপর রাশ টানতে পারে বাংলাদেশের বোলাররা। তবে দ্বাদশ ওভারে জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। এরপরই আথানেজকে (২৭) জুটি ভাঙেন রিশাদ। দ্বিতীয় উইকেটে আরেকটি জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন কিং ও কেসি কার্টি। সেই চেষ্টাও সফল হতে দেননি রিশাদ। দ্বিতীয় শিকার ধরেন তিনি ধুঁকতে থাকা কার্টিকে (৩০ বলে ৯) ফিরিয়ে। এরপরই ধসে পড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। মূল বাধা হয়ে থাকা কিংকে (৪৪) বিদায় করার পর ওই ওভারেই তিনি ফেরান শেরফোন রাদারফোর্ডকে ()। একটু পরই চেইসকে ফিরিয়ে রিশাদ পূরণ করেন পাঁচ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসও ভেঙে পড়ে দ্রুতই।

ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ১০ ওভারে ১৬ রান দেওয়া মিরাজ ফেরান গুডাকেশ মোটিকে। দুই অলরাউন্ডার জাস্টিন গ্রেভস ও রোমারিও শেফার্ডকে দাঁড়াতে দেননি মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ উইকেট নিয়ে রেকর্ডের উচ্চতায় উঠে ম্যাচ শেষ করে দেন রিশাদ। ২৬ রান এবং ৬ উইকেটে ম্যাচের সেরা তিনিই। মোস্তাফিজ ১৬ রান দিয়ে ২টি এবং মিরাজ ১৬ রান দিয়ে ১টি উইকেট দখল করেন। সিরিজের পরের ম্যাচ আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পাঁচ স্তম্ভের উপর
পরবর্তী নিবন্ধএকটি রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত হতে পারে ৫০টির বেশি ধরনের ক্যান্সার