রিক্সা চালাও রসিক বন্ধু, সামনের রাস্তা দিয়া,
মুই অভাগী চাইয়া থাকি, জানালা মেলিয়া রে
রিক্সা চালাও রসিক বন্ধুরে।।
(কথা ও সুর : আবদুল গফুর হালী,
মূল শিল্পী : শেফালী ঘোষ)
বাড়ির সামনে যে রাস্তা, সেই রাস্তায় রিক্সা চালায় রসিক বন্ধু। তখন যৈবতী কন্যার মন যেন কেমন করে, সে ঘরের জানালা খুলে বসে থাকে; দুই চোখ ভরে দেখে তার বন্ধুকে।
আসতে যাতে রিক্সাওয়ালা রিক্সাত মার বেল
ঘরর ভিতর থাকি আঁর বুগত পরে শেল রে।।
রসিক বন্ধু আসলেই রসিক। সে প্রেমিকার বাড়ির সামনে দিয়ে চলার সময় অকারণে রিক্সায় বেল মারে ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং। আর সেই বেল শুনে অবলা নারীর বুকে প্রেমের শেল বিঁধে!
ঠিক দুইজ্জা চালাও রিক্সা গঅদি পরে ঘাম,
মনে কয়দে আঁচল দি মুছাইয়া দিতাম।।
ঠিক দুপুরে, সবাই যখন তপ্ত রোদে কাহিল, তখনো রিক্সা চালায় রসিক বন্ধু, কেন, কীসের আশায়? প্রচণ্ড গরমে সারা গায়ে ঘাম ঝরে রিক্সাওয়ালার, তখন অবলার ইচ্ছা হয়, বন্ধুর গায়ের ঘামটা মুছে দিতে। এতক্ষণ নারীর বুক ফেটেছে, এবার মুখ ফুটবে।
হুন হুন কই তোঁয়ারে রিক্সার ডেরাইবার
তোঁয়ার রিক্সাত গরিবা নি আঁরে পেসিঞ্জার রে।।
বাংলা লোকগানে শ্রমজীবী মানুষের কথা এসেছে রূপ–ঢঙে, বর্ণে–ছন্দে। যে মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশ ও দশের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে তারা সমাজের উচ্চাঙ্গে অনাদরে থাকলেও সাধারণ্যে বরেণ্য। যুগে যুগে সমাজের প্রান্তিক নারীরা নিম্মবিত্তের শ্রমজীবী মানুষগুলোর প্রতি একটু বেশিই আকর্ষিত। তাই তো চিলমারি বন্দরের সেই গাড়িয়াল ভাইয়ের প্রেমে আকুল হয় অবলা নারী…
ওকি গাড়িয়াল ভাই
কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে,
যেদিন গাড়িয়াল উজান যায়
নারীর মন মর ছুইরা রয় রে …
ওকি গাড়িয়াল ভাই
হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারির বন্দরে রে।।
-(শিল্পী আব্বাস উদ্দিন)
তেমনি সাগর–ঘেঁষা চট্টগ্রাম উপকূল বা পাহাড়, নদী–ঘেরা সমতলের নারীরা বহুকাল ধরে মেঠোপথের বেপারি চুড়িওয়ালা বা কর্ণফুলীর মাঝির প্রেমে পড়েন, কূল হারিয়ে অকূলে ভাসেন।
পালে কি রঙ লাগাইল রে মাঝি
সাম্পানে কি রঙ লাগাইল,
শঙ্খ নদীর সাম্পানওয়ালা মোরে পাগল বানাইল।
জোয়ারে আসিল রে সাম্পান,
ভাটির টানে আবার কই গেল।।
(কথা ও সুর : ইয়াকুব আী সরকার,
মূল শিল্পী : শেফালী ঘোষ)
সাগরকন্যা চট্টগ্রামের এক কূলে শহর–বন্দর–পাহাড়, আরেক কূলে সবুজ গ্রাম। মাঝখানে কর্ণফুলী নদী। চাঁডিয়া শহরের ‘রিক্সাওয়ালা, টেক্সিওয়ালা, বাস কন্ডাকটার কিংবা কর্ণফুলী–শঙ্খ–মাতামুহুরী ও বাঁকখালীর সাম্পানওয়ালা, তারা সবাই কিন্তু ভীষণ প্রেমিক; তারা কখনো সাম্পানে হালিশ মেরে, কখনো রিক্সায় বেল মেরে অবলা নারীর মন চুরি করে, পালে রঙ লাগিয়ে নারীর মনে রঙ ছড়ায়। আবার নারী মাত্রেই প্রেমপিয়াসী, তাই তারাও শ্রমজীবী মানুষগুলোর প্রেমে উতলা হয়, আরেঠারে রিক্সাওয়ালাকে প্রেম নিবেদন করে…
ছিটর উয়র বই গাও গুণগুণ গরি গান,
হুডর কোণাত লেখা আছে ভালবাসার দাম রে
রিক্সা চালাও রসিক বন্ধুরে।।
চাটগাঁইয়া গানের প্রধানতম ধারা আঞ্চলিক গান। এই গানের উদগাতা বিশেষত চট্টগ্রাম–কক্সবাজার অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ। ঘাস যেমন জন্মায়, গাছে যেমন ফুল–ফল আসে, আঞ্চলিক গানেরও সৃষ্টি অনেকটা তেমনই, প্রাকৃতিক। তবে এই গানের শ্রোতা–ভক্তকূলে সব শ্রেণির মানুষই আছে। এককালে শহুরে তথাকথিত শিক্ষিত বা ‘ভদ্র’ সমাজে আঞ্চলিক গান অশ্লীল বা ‘কাউয়া গান’ হিসাবে অবহেলিত ছিল। তবে বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে কলকতার এইচএমভি থেকে যখন চট্টগ্রামের সন্তান মোহাম্মদ নাসির ও মোহাম্মদ হারুনের কণ্ঠে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের গ্রামোফোন রেকর্ড বের হয়, তখন এই গান গণমানুষের প্রাণ হয়ে উঠে, আঞ্চলিক গান নিয়ে ভদ্র সমাজের নাক ছিটকানি কমতে থাকে। তাইতো এইচএমভিতে রেকর্ড হওয়া মোহাম্মদ হারুনের ‘রেঙ্গুম রঙিলার সনে’, এবং মোহাম্মদ নাসিরের ‘চাঁন মুখে মধুন হাসি’ গানগুলো প্রায় শতবর্ষ ধরে সমান জনপ্রিয়, সবার কাছে।
ষাটের দশকে কালুরঘাট বেতার প্রতিষ্ঠার পর আঞ্চলিক গানে নবজোয়ার আসে, আর স্বাধীনতার পর এই গান সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা হয়ে উঠে। আস্কর আলী পণ্ডিত, কবিয়াল রমেশ শীল, মোহাম্মদ নাসির আমাদের চাটগাঁইয়া গানের মহাজন। মলয় ঘোষ দস্তিদার, অচিন্ত্যকুমার চক্রবর্তী, মোহন লাল দাশ, সেকান্দর গায়েন, খাইরুজ্জামা পণ্ডিত, এম এন আখতার, আবদুল গফুর হালী, এম এ রশিদ কাওয়াল, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব, শেফালী ঘোষ, ইয়াকুব আলী সরকার, লক্ষ্মীপদ আচার্য্য, আমান উল্লাহ গায়েন, আহমদ কবির আজাদ, কল্যাণী ঘোষ, সঞ্জিত আচার্য্য, শিল্পী রানী, কান্তা নন্দী প্রমুখ হলেন সত্তরের দশকে আঞ্চলিক গানের সুবর্ণসময়ের সারথি। আশির দশকে এসে আঞ্চলিক গানের মুকুটে নুতন পালক যোগ করেন সৈয়দ মহিউদ্দিন, কক্সবাজার অঞ্চলের কিংবদন্তী বুলবুল আকতার। বিংশ শতাব্দীতে আঞ্চলিক গানে নতুন ঝড় তুলেন ‘হেডমাস্টর’খ্যাত শিল্পী সিরাজুল ইসলাম আজাদ।
স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। শ্যাম–শেফালী জুটি এই গানকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেন। সত্তরের দশকে রুনা লায়লার পর আরেকজন মাত্র শিল্পী লন্ডনের বিখ্যাত রয়্যাল আলবার্ট হলে গান করে খ্যাত হয়েছিলেন, তিনি হলেন চট্টগ্রামের শেফালী ঘোষ।
বাংলা লোকগানে শ্রমজীবীর জীবনচিত্র বাঙময় হয়ে উঠেছে। ধরুন, হাতির মাহুত। মাহুত হাতি ধরতে দূর পাহাড়ে চলে যায়, একটা হাতি ধরতে পারলে কিছু টাকা পায়। হাতি ধরতে গিয়ে ওই অঞ্চলের কোন নারীর সঙ্গে প্রেমে জড়ায়। একদিন সেই এলাকা ছেড়ে নিজ দেশে ফিরতে হয় মাহুতকে, তখন আকুল হয় প্রেম–পিয়াসী; মাহুত বন্ধুকে প্রশ্ন করে…
আরে গেলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে,
হস্তির নড়ান হস্তির চড়ান, হস্তির গলায় দড়ি
ওরে সত্য করিয়া কনরে মাহুত, কোনবা দ্যাশে বাড়িরে।
মৈষাল, মাহুত বা চিলমারির সেই গাড়িয়ালের জন্য নারীর যে অশ্রুধারা তেমনি অজপাড়ার সখিনাকেও তো ভুলতে পারে না সেই রিক্সাচালক, যে ঢাকা শহরে রিক্সা চালায়। ফকির আলমগীরের দরাজ কণ্ঠের সেই গান কি আমাদের মনে নেই?
ও সখিনা গেছস কি না ভুইল্যা আমারে
আমি অহন রিস্কা চালাই ঢাকা শহরে।।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানে যে শ্রমজীবী শ্রেণীর কথা সবচেয়ে বেশি এসেছে তারা হলেন চাম্মান (সাম্পান) মাঝি। ১৯৩২ সালে এইচএমভি থেকে মোহাম্মদ নাসিরের কণ্ঠে গ্রামোফোন রেকর্ডের সেই গান ‘চাঁন মুখে মধুর হাসি/দেবাইল্যা বানাইল মোরে সাম্পানের মাঝি’–এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সেই গানে সাম্পানওয়ালার শৌর্যবীর্য গীত হয়েছে এভাবে…
কুতুবদিয়ার দক্ষিণ রে ধারে সাম্পানওয়ালার ঘর,
লাল বঅটা দিয়ে রে তুলি সাম্পানর উয়র।
বাহার মারি যারগৈ সাম্পান ন মানের উজান ভাটি।।
শেফালী ঘোষের কণ্ঠে মোহন লাল দাশের সেই অমর সৃষ্টি, ‘ওরে সাম্পানওয়ালা তুই আমারে করলি দেওয়ানা’ কিংবা সঞ্জিত আচার্য্যের ‘বাঁশখালীমইষখালী’ গানের মূল উপজীব্য হলো প্রান্তিক মানুষের প্রেম।
তবে, শ্রমজীবী মানুষের কথা করুণ সুরে এসেছে কবিয়াল রমেশ শীলের গানে। কামার–কুমার, চাষি, নাপিত শ্রেণী নিয়ে অসংখ্য গান আছে তার। ‘দেশদরদী গানের বহি’ গ্রন্থে ১০টি গান আছে। সবগুলো গানেই আছে কৃষক মজুরের কষ্টের কথা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাট নিয়ে যে বঞ্চনার শিকার হন পূর্ব বাংলার চাষি তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা রয়েছে নিচের গানে…
মানুষ বাঁচবে কেমন করে,
যাঁতাকলে পিষে মারে, চাষি আর মজুরে
এবার শুনে পাটের দর, চাষির গায়ে এসেছে জ্বর।।
আঞ্চলিক গান আর জেলে–জীবন অনেকটা ওতোপ্রোত। জেলে পরিবারের সুখ–দুঃখ, নর–নারীর প্রেম, ঝড়–জলোচ্ছ্বাসের কথা বারবার এসেছে এই গানে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটির রচয়িতা আবদুল গফুর হালী, শিল্পী শ্যাম–শেফালী। গানটি হলো…
স্ত্রী : তুঁই যাইবা সোনাদিয়া বন্ধু মাছ মারিবল্লাই,
তোঁয়ারে ছাড়া হাইল্যা ঘরত কেনে থাইক্যুম আঁই।।
স্বামী : কয়েকখান দিন রাইখ্খ কইন্যা তুঁই মন রে বোঝাই
শাড়িচুড়ি কানর বালি আইন্যুম তোঁয়াল্লাই।।
স্বামীর শাড়িচুড়ির লোভেও মন মানে না স্ত্রীর। তাই বিলাপ করে স্বামীকে সোনাদিয়া যেতে নিষেধ করে…
ন লাগিব শাড়িচুড়ি ন লাগিব কানর বালি
বসর কালে ন যাইও ফেলাই
তুঁই আঁর আদরর ধন তুঁই আঁর জীবন মরণ
সোনার যৈবন রাখ্িখ তোঁয়াল্লাই।।
কিন্তু স্বামী নিরূপায়। তাই সে অবুঝ স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেয়…
তোঁয়ার সুন্দর মুখ্খান চাই, ঘরত যদি বই থাই
বাঁচিবার তো কনঅ উপায় নাই,
ঘরত থাইলে বেগার পরি, উয়াস তিরাস যাইয়্যুম মরি
এই কথাল্লাই বৈদেশ যাইতাম চাই।’
(সূত্র : আবদুল গফুর হালীর চাটগাঁইয়া নাটকসমগ্র : সুফী মিজান ফাউন্ডেশন)
সৈয়ম মহিউদ্দিন হলেন জীবনমুখী আঞ্চলিক গানের স্রষ্টা। এই নগরের হোটেল শ্রমিক, যারা মরিচ–হলুদ বাটেন তাদের জীবনকথা কী মায়াময় হয়ে উঠেছে তার গানে…
আসকার ডিইর পুক পারে আঁর ভাঙাচোরা ঘর
হলইদ মরিচদ মমসল্লা বাড়ি হোটেলর।।
(চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান : কল্যাণী ঘোষ, বাংলা একাডেমি)
হোটেলে মমসল্লা বেটে যাদের জীবন কাটে তারাও দেখা পায় তেলকাজলা বন্ধুর, সেই বন্ধু মিঠে কথায় নারীর মন ভোলাতে চায়..
বঅস্তি আর হাঁনডিওয়ালায় মিডা কথ কয়
ঠগা হাসি মারি চলি আঁইও তারাল্লয়।
আঁর পিরিতি বাআই তরকারি করকরা ভাতর।।
আসলেই তো, কাজের মানুষের সময় কোথায় কারও মিঠে কথায় মজার? তার প্রেম তো হোটেলের বাসি তরকারি আর ভাতের সাথে। এই তরকারি আর ভাতটুকু সন্তানের মুখে তুলে দিতে পারার চেয়ে আনন্দ আর কীসে? তাই সে বস্তি আর হাঁনডিওয়ালার সাথে ঠগা হাসি মেরে কাজ চালিয়ে যায়। মহি এরপর লিখেছেন অমূল্য কিছু পঙতি।
আছিল আঁর ঘরর মানুষ আছিল বেয়াগ্িগন
মঅদি বাড়ি হাতত দিতাম পাইল পরবদ্দিন।
হেই সুখ ভাবি ন কাঁদি আর, দুখ বন্ধু আঁর কোয়ালর।।
মহি–আল ভাণ্ডারীর গানে শ্রমজীবী মানুষের কিছু নিষ্ঠুরতার চিত্রও এসেছে…
আয় হায় রে, গরু টানের গরুর গাড়ি
মুখত ফেনা চোগত পানি, রাস্তা ধরি যারগৈ টানি
ফাঁত ফাঁত ফাঁত পিডুত পরের, আইল্যা ছোঁয়ার বারি।।
সঞ্জিত আচার্য্য রচিত ‘ওরে বাস কন্ডাকটার’ গানটি অনেকটা হাস্যরসের। শ্যাম–শেফালী যখন অঙ্গভঙ্গি করে গানটি মঞ্চে গাইতেন তখন দর্শক সারিতে হাসির রোল পড়ত। আবার সঞ্জিত–কল্যাণী জুটির ‘ও টেক্সিওয়ালা তুঁই কাপ্তাই যাইবা না’ গানেও রসের ভিয়েন আছে।
‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যুম তোঁয়ারে’ গান–খ্যাত এমএন আখতার চাটগাঁইয়া গানের একজন লিজেন্ড। তার লেখা এবং শ্যাম–শেফালীর গাওয়া নিচের গানটিও গানটিও যথেষ্ট রসালো।
নারী : ও টেক্সিওয়ালা, তুঁই চাকতাই যাইবানি
পইসা কড়ি দিত ন পাইজ্জ্যম পৌঁছাই দিবানি।।
পুরুষ : ও সুন্দরী অবলা, তুঁই মুখ ন গইজ্জ্য কলা
আঁর কথা রাইবানি।
পইসার বদল তোঁয়ার মন্নান আঁরে দিবানি।।
শুধু টেক্সিওয়ালা–রিকশাওয়ালা বা মাঝি নয়, আঞ্চলিক গানে আছে ‘ডালা কুলা চালঅইন’ বেপারি বা ‘চুড়িওয়ালা–ফিতাওয়ালা’র কথাও। এমএন আখতারের একটি বিখ্যাত আঞ্চলিক নাটক হলো ‘চুড়িওয়ালা’। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সেই নাটকে অভিনয় করেছিলেন পরবর্তিতে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’–খ্যাত অঞ্জু ঘোষ। এমএন আখতারের কণ্ঠে গ্রামোফোন রেকর্ডে নিচের গানটি তুমুল জনপ্রিয় ছিল…
ও চুড়িওয়ালা ফিতাওয়ালা, এই বাড়িত আইও
উগ্গা টেঁয়ার নাইলন চুড়ি আঁরে দি যাইও।
হেডমাস্টরখ্যাত শিল্পী সিরাজুল ইসলাম আজাদের সেই ‘আমেনা’র কথা কি ভোলা যায়? যে আমেনা গ্রাম ছেড়ে শহরে গেছে, গার্মেন্টসে চাকরি পেয়েছে!
আমেনা রে তোঁয়ার খবর জানি
দুঃখ পাইলেও খুশি অইলাম হুনি।
তুঁই গ্রাম ছাড়ি শঅরত গিয়্য মরিয়মর বুদ্ধি লই,
গার্মেন্সত চঅরি গঅরর আঁরে চাইও ভুলি যাইবাগই।’
সাধারণত প্রেমিকরাই প্রেমিকাকে ছেড়ে গ্রাম থেকে শহরে যায়। কিন্তু আলোচ্য গানের বিষয় বিপরীত। এখানে শহরে যাওয়া প্রেমিকার জন্য হৃদয়ে কষ্টের তুফান উঠে গ্রামে থাকা প্রেমিকের। মন মানে না তার; প্রেমিকা যদি তাকে ভুলে যায়! শহরে যদি কারও প্রেমে পড়ে? তাই গ্রাম্য প্রেমিক গায়…
‘শঅরত বেগ্গুন রঙর মানুষ, মন যাইত চায় উরি,
কেন গরি বাঁচি থাইবা রঙত ন পরি
আঁইত কইত ন পারি।
কনে গরের খবরদারি কনে তোঁয়ারে দের দে চঁই।।
(সূত্র : অডিও ক্যাসেট হেডমাস্টর, প্রযোজনা–আমিন স্টোর)
আসলে শহুরে বনে যাওয়া আমেনাদের জন্য গাঁও–গেরামের প্রেমিকদের কান্না কখনো থামে না। তাইতো তারা কথা আর সুরে তালাশ করে হারানো প্রেমকে, আমেনাকে…
ও আমেনা, তুঁই কেন আছ আঁই ত ন জানি
ন পাইর তোঁয়ার খবরগান, ভালা মন্দ কনঅ এক্কান
ওরে আঁর কথাগান মনত আছে নি।।
লেখক : সাংবাদিক ও চট্টগ্রামের লোকসংগীত গবেষক