শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র না পাওয়ার বক্তব্যে ‘রাষ্ট্রপতির শপথ ভঙ্গ এবং তার পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে ভাবতে হবে’ বলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই অবস্থান তুলে ধরেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তবে সরকার মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলেও জানানো হয়েছে। আবার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না–এমন অবস্থান না জানিয়ে বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশের পর থেকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বা তার পদত্যাগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মধ্যে সাংবাদিকদের সামনে এই বক্তব্য তুলে ধরা হলো। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পর আইন উপদেষ্টার মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, আসিফ নজরুল যা বলেছেন এটার সঙ্গে সরকার একমত পোষণ করে। রাষ্ট্রপতিকে সরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা–এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে এমন চিন্তা আছে কিনা জানতে চাইলে জবাব এল, সেটা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। যদি সরকার রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের উদ্যোগ নেয়, সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে– এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, যে সিদ্ধান্ত হয়নি সে বিষয় কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেটা নিয়ে আলোচনা অবান্তর।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখা এবং বর্তমানে সরকারের নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করা প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংকে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, মামলা করাটা গণতান্ত্রিক অধিকার। গণহারে মামলা আমরাও সাপোর্ট করছি না। মামলা করাটা আপনি কাউকে ঠেকাতে পারবেন না। যখন বাদী বলেছেন তাকে চেনেন না, তখন তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বাদী ভুলবশত মামলা করেছেন। এই মামলার সঙ্গে সরকার মোটেও সংশ্লিষ্ট নয়। জেড আই খান পান্না সাহেব নিজেও বলেছেন এই মামলা রাজনৈতিক কারণে হয়নি, সম্ভবত হয়েছে ব্যক্তিগত কারণে।
সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে : নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির বিষয়ে এক প্রশ্নে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আইনে বলা হয়েছে কারা কারা থাকবেন। যেহেতু আইনটি বলবৎ আছে, এখনও পরিবর্তন হয়নি, সার্চ কমিটি গঠন করতে হলে এই আইনটা অনুসরণ করেই করতে হবে। অন্য কোনো বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা সার্চ কমিটির জন্য নাম চেয়েছেন কিনা–এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে নাম চাইতেই পারে। আইনে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বলা আছে। সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেই সার্চ কমিটি গঠন হবে।
সংস্কার কমিশনের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর একটা দাবি আছে দ্রুত নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নির্বাচন প্রক্রিয়ারই একটা অংশ সার্চ কমিটি। সংস্কার এবং সার্চ কমিটি দুটো প্রক্রিয়া আলাদা আলাদাভাবে চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা দাবির মাঝে সরকারের অবস্থান কী–এমন প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, যে দাবিগুলো আছে সেগুলো যদি যৌক্তিক হয় তাহলে সরকার অবশ্যই পর্যালোচনা করবে। দীর্ঘদিনের অপশাসনের কারণে মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রত্যেকের যৌক্তিক দাবি দাওয়া সরকার শুনবে। সরকার প্রত্যেকটা দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল।