রাশিয়ার জ্বালানি তেলের নমুনা চট্টগ্রামে পরীক্ষার পর আমদানির সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৬ আগস্ট, ২০২২ at ৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা যাবে কিনা তা শুধু তেলের মানই নয়, আনুষঙ্গিক আরো বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। তবে রাশিয়া থেকে আসা নমুনা পরীক্ষার পর বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রাশিয়া থেকে আসা জ্বালানি তেলের নমুনা চট্টগ্রামে পৌঁছালেও ইস্টার্ন রিফাইনারির ল্যাবে এখনো সেটি পরীক্ষা করা হয়নি। আগামী দিনকয়েকের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে বিপিসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের শুরু থেকে অস্থির হয়ে ওঠে জ্বালানি তেলের বাজার। তেল পরিবহনে তৈরি হয় বড় ধরনের সংকট। এর জের ধরে বিশ্ববাজারে হু হু করে বেড়ে যায় তেলের দাম। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের দেশে দেশে তেল সরবরাহ এবং যোগানে অস্থিরতা তৈরি হয়। ভারত, চীনসহ বেশ কিছু দেশ রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কিনে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। রাশিয়া গত মে মাসে বাংলাদেশকেও অপরিশোধিত
জ্বালানি তেল কেনার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। বিশেষ করে রাশিয়ার জ্বালানি তেল পরিশোধন করার মতো অবস্থা বাংলাদেশের নেই। দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে যে মানের ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা হয় রাশিয়ার ক্রুড অয়েল তার থেকে নানা উপকরণে কিছুটা অন্যরকম। এতে করে রাশিয়ার প্রস্তাবের পর বাংলাদেশ ক্রুড অয়েলের পরিবর্তে রাশিয়া থেকে সম্ভব হলে পরিশোধিত তেল কেনার ব্যাপারে কিছুটা আগ্রহ দেখায়। তবে এক্ষেত্রেও বহু ধরনের সমীকরণ কাজ করবে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, বাংলাদেশের আগ্রহের প্রেক্ষিতে রাশিয়া থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহের ব্যাপারে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ইতোমধ্যে রাশিয়া থেকে আসা জ্বালানি তেলের নমুনা ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পৌঁছেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এই নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। নমুনা পরীক্ষার পর বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বিপিসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আসলে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করা যাবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। শুধু তেলের মানই নয়, আরো বেশ কিছু বিষয় এতে জড়িত। এর সাথে জড়িত কূটনৈতিক নানা বিষয়ও। সবকিছু যোগ বিয়োগ করেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে জ্বালানি তেলের নমুনা পরীক্ষার পর বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
অপর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশ তেল আমদানি করে। দেশের তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা হয়। এর থেকে ৬ লাখ টন ডিজেল এবং অন্যান্য পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়। এর বাইরে প্রয়োজনীয় সব তেলই পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে পরিশোধিত অবস্থায় আনা জ্বালানি তেল সরাসরি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু রাশিয়ার পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরাসরি ব্যবহার করা যাবে না। রাশিয়ার শীর্ষ তেল কোম্পানি রোজনেফট তাদের যে পরিশোধিত তেল সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলোতে সালফারের পরিমাণ অত্যধিক। যা পুনরায় পরিশোধন করতে হবে। পরিশোধিত জ্বালানি তেল পুনরায় পরিশোধন করতে গেলে যে পরিমাণ খরচ হবে তা কতটুকু সাশ্রয় হবে তা নিয়েও হিসেব নিকেশ করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ার তেলের গুণগত মান, পরিশোধন ব্যয়, তাপ উৎপাদনের সক্ষমতা, পরিবহন ব্যয় সহ বিভিন্ন বিষয় দেখতে হবে। এর বাইরে কূটনৈতিক কিছু ইস্যুও রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক মতো হলেই কেবল রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করা হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুয়েটে দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগে পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধঅবশেষে মুক্তি জাসেদুলের