আজ শুক্রবার এক বছর অতিক্রম করছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুদ্ধের বর্ষপূর্তির আগের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার পরমাণু অস্ত্রসম্ভার বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি জানান, পরমাণু অস্ত্রসম্ভার বাড়ানোর জন্য আরও ব্যয় বরাদ্দ করতে চলেছে তার প্রশাসন। অন্যদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে আরও একবার জোরালো ভাষায় আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বুধবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এক সভায় ভাষণে তিনি বলেন, এই যুদ্ধ আঞ্চলিক অস্থিরতা উসকে দিচ্ছে এবং সেই সাথে বিশ্ব জুড়ে উত্তেজনা এবং বিভেদ সৃষ্টি করছে।
আর এ কারণে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংকট সমাধানের ওপর থেকে নজর এবং সম্পদ সরে যাচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ার করেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরোক্ষ হুমকির কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে আসার এখন উপযুক্ত সময়। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক, দুই পক্ষের হাজারো সৈনিক নিহত হয়েছে। একইসঙ্গে যুদ্ধ ঘিরে মস্কো আর পশ্চিমাদের মধ্যে উদ্বেগের পারদ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন। যুদ্ধের বছরপূর্তির প্রাক্কালে পুতিন সেই নির্দেশের সমর্থনে কথা বলছেন। বলছেন পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধির কথা। অন্যদিকে শক্তিধর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
রাশিয়া–ইউক্রেন কারো পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই : জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসবিদ নিকোলায় মিত্রোখিন বলেন, মৌলিক দৃশ্যকল্প রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন কোনো দেশই তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। রাশিয়ার গোটা ডনবাস দখলের সক্ষমতা নেই বললেই চলে। দেশটি জাতি হিসেবে ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দেবে। ইউক্রেন ২০১৪ সালের জানুয়ারির সেই সীমান্ত আর ফিরে পাবে না। ২০২৩ সালের শেষে কিংবা ২০২৪ সালে এই যুদ্ধ শেষ হতে পারে। কারণ দুই দেশই তাদের রসদ ফুরিয়ে ফেলবে। প্রধান কারণ হলো, ইউক্রেন ও রাশিয়া যা অর্জন করতে চাইছে, তার জন্য দুই পক্ষের কারো কাছেই পর্যাপ্ত অস্ত্র, গোলাবারুদ কিংবা জনবল নেই।
মনে হয় যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকবে : লন্ডনের কিংস কলেজের রুশ রাজনীতির অধ্যাপক গুলনাজ শরাফুতদিনোভা বলেন, যুদ্ধের শুরুতে থাকা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি সামরিক বিপর্যয় স্বত্বেও এখনো পুতিনের অবস্থান সুদৃঢ়। বিভিন্ন অভিজাত গোষ্ঠী হয়তো সামরিক ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব ও কার্যক্রম বাড়িয়ে পুতিনের পেছনে এক হয়েছে। অনেক অভিজাত গোষ্ঠী হয়তো যুদ্ধের সমালোচনা করে। তবে তারা প্রতিশোধের ভয়ের পাশাপাশি পুতিনের সঙ্গে লেগে থাকার কৌশলের অংশ হিসেবে সচেতনভাবেই রাশিয়ার জয় চায়। নিষেধাজ্ঞায় ঠিকঠাকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে না পারা নিঃসন্দেহে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর উৎপাদন ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। কিছু কিছু যন্ত্রাংশ পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে খোঁজা হলেও পুরোপুরি প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় না।
ইউক্রেনে স্মারক নোট উন্মোচন : রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রথম বার্ষিকীতে যুদ্ধের স্মরণে নতুন স্মারক নোট উন্মোচন করেছে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০ রিভনিয়ার ওই নোটের একদিকে তিনজন সৈন্য ইউক্রেনের জাতীয় পতাকা উঁচু করে ধরে আছেন, অন্যপাশে পিছমোড়া করে বাঁধা দুই হাত। পিছমোড়া করে বাঁধা ওই দুই হাতের মাধ্যমে কিয়েভ ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের কথা বলতে চাইছে। যদিও মস্কো ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।