কক্সবাজারের রামুর মাদকের আখড়া খ্যাত চেরাংঘাটা এলাকায় ক্ষেমানি বড়ুয়া নামের ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব লুট করেছে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারী মো. সুমন (৩০)।
ঘটনার একদিন পর আজ শনিবার (২৬ জুন) দুপুরে সেই মাদক কারবারী সুমনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে স্বয়ং তার বাবা নুর কবির।
ছুরিকাহত বৃদ্ধা ক্ষেমানি বড়ুয়া সংকটাপন্ন অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নুর কবির নিজেই ফোন করে এ প্রতিবেদককে জানান, পরিবারের অবাধ্য ছেলে সুমনের নানা অপকর্মের কারণে তিনি নিজেও অতিষ্ঠ। প্রতিদিন কোনো না কোনো ঘটনা ঘটাচ্ছে। সর্বশেষ ওই বৃদ্ধাকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাই করে তার ছেলে সুমন। এলাকাবাসীও তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
তাই নিরুপায় হয়ে এলাকার কিছু লোকজনের সহযোগিতায় তাকে ধরে ঘরে আটকে রেখে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। এই কাজটি করতে পেরে নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে বলে জানান নুর কবির।
মাদক ব্যবাসায়ী ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি এলাকায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এর আগে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেরাংঘাটা এলাকায় গতকাল শুক্রবার (২৫ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে ক্ষেমানি বড়ুয়া নামের ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে ছুরিকাঘাত করে স্বর্ণের অলংকার, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
এ সময় সুমন ও তার অপর দুই সহযোগী ওই বৃদ্ধের গলা, কাঁধ ও হাতসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে ছুরিকাঘাত করে।
বর্তমানে ওই বৃদ্ধার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত বৃদ্ধা ক্ষেমানি বড়ুয়া নিজের জরাজীর্ণ ঘরে না রেখে তার জীবনের শেষ সম্বল একটি স্বর্ণের গলার হার (কন্ডির ছড়া) ও কয়েক হাজার নগদ টাকা তার কোমরে থাকা কাপড়ের জালিতে বেঁধে রাখতেন।
বিষয়টি জানতে পেরে মো. সুমনের নেতৃত্বে ছিনতাইকারী চক্র ওই বৃদ্ধাকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করে এসব লুট করে।
ছুরিকাহত বৃদ্ধা ক্ষেমানি বড়ুয়া রামুর পূর্ব রাজারকুল বড়ুয়া পাড়ার অমিয় বড়ুয়ার স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, সুমন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারী। সুমনসহ আরও কয়েকটি মদ পাচারকারী সিন্ডিকেট নাইক্ষ্যংছড়ি ও সোনাইছড়ি থেকে বাংলা মদ এনে দীর্ঘদিন ধরে চেরাংঘাটা মাদকের আঁখড়ায় পাইকারি মূল্যে সরবরাহ করে আসছে।
মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এসব সিন্ডিকেটের নানা অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হলেও সাধারণ মানুষ কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না।
মাদক ব্যবসার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম সংঘটিত করে এই সুমনসহ আরও সংঘবদ্ধ একাধিক মাদকপাচারকারী চক্রের সদস্যরা।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, তাকে ধরা হয়েছে। তবে এখনো থানায় আনা হয়নি।
ওসি বলেন, “প্রাথমিকভাবে মোবাইল ফোন ও কিছু টাকা লুট করার কথা সে স্বীকার করেছে। ওই জিনিসগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “ভিকটিমের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও হাসপাতালে গিয়ে বৃদ্ধাকে দেখে এসেছি। কিছু আর্থিক সহযোগিতাও দিয়েছি। তারা ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে হাসপাতালে আছে। ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলেই মামলা রেকর্ড করা হবে।”