পার্বত্য খাগড়াছড়ির সাবেক মহকুমা শহর সীমান্তঘেঁষা রামগড়ে ফেনী নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পথে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু করে ২০২০ সালের এপ্রিলে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বৈশ্বিক মহামারিতে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়ে আগামী ৫ জানুয়ারীর মধ্যে শেষ হবে এর নির্মাণ কাজ। এরপর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী রামগড়ে ফেনী নদীর উপর নির্মিত স্বপ্নের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করবেন।
স্বপ্নের মৈত্রী সেতু নির্মাণ হওয়ার পরপরই বহুল কাঙ্ক্ষিত রামগড়ে স্থলবন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে স্থলবন্দরের জন্য প্রায় ১০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চুড়ান্ত পর্যায়ে। স্থলবন্দর নির্মিত হলে গতিশীল হবে পাহাড়ের অর্থনীতি। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন, কর্মসংস্থান, আমদানি-রফতানিসহ অর্থনীতর নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে এমনটাই মনে করছে স্থানীয়রা। রামগড় স্থলবন্দর হবে দেশের ১৫তম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম স্থলবন্দর। এদিকে ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে তাদের সেভেন সিস্টারখ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের গেটওয়ে হিসেবে দেখছেন রামগড় স্থলবন্দরকে।
ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনপফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ৮২ দশমিক ৫৭ কোটি রুপি ব্যয়ে রামগড়ের মহামুনিতে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের দুই লেন বিশিষ্ট মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ১২টি পিলার সম্বলিত স্বপ্নের মৈত্রী সেতুটির বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি পিলার। এছাড়াও স্প্যান রয়েছে ১১টি। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে সাতটি ও ভারত অংশে ৪টি। নদীর অংশে ৮০ মিটারের স্প্যান এবং নদীর দুই পাড়ের ৫০ মিটারের দুটিসহ মোট ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ তিনটি স্প্যানই হচ্ছে মেইন স্প্যান।
এরমধ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে গেল ১৮ আগস্ট ২০২০ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে হেয়াকে-বারৈয়াইয়ারহাট সড়কের জন্য ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পসহ সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটিতে সরকার দেবে ২৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যে রামগড়-বারৈয়ারহাট সড়কের বেশ কয়েকটি দুই লেন বিশিষ্ট ব্রিজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
রামগড় পৌরসভার মেয়র কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান রিপন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সীমান্তবাসীরা আশার আলো দেখছেন। দ্রুত স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মান হলে বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কর্মসংস্থান।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু চালু হলে পার্বত্য এলাকার অর্থনীতি বিকশিত হবে। সেতু ঘিরে স্থলবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছি। স্থলবন্দর চালু হলে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। ’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।