রাফাহ ক্রসিং কি গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রাণ বাঁচানোর একমাত্র পথ

| মঙ্গলবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ at ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

যেকোনো সময় গাজায় স্থল অভিযান শুরু করবে ইসরায়েল। প্রাণ ভয়ে ছোট্ট ভূখণ্ডটির বাসিন্দারা জড়ো হয়েছেন দক্ষিণের রাফাহ বর্ডার ক্রসিংয়ে। আশা সীমান্ত পেরিয়ে মিশরে প্রবেশ করা। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকদের গাজা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে এবং মানবিক ত্রাণ ভেতরে প্রবেশ করাতে রাফাহ ক্রসিং এরইমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। তবে কখন খোলা হয়েছে যে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। যদিও সোমবার সকালে রাফাহ ক্রসিং বন্ধই দেখতে পেয়েছে বিবিসি। খবর বিডিনিউজের।

রাফাহ ক্রসিং কী? : গাজা থেকে বের হওয়ার সর্বদক্ষিণের পোস্ট রাফাহ ক্রসিং। ক্রসিং পার হলে মিশরের সিনাই মরুভূমি। রাফাহ ছাড়া গাজা থেকে বের হওয়ার ও প্রবেশের আর মাত্র দুইটি ক্রসিং রয়েছে। সেগুলো হলো, গাজার উত্তরে ইসরায়েল সীমান্তের এরেজ ক্রসিং এবং কেরেম শালম, যেটি মূলত ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে একমাত্র বাণিজ্যিক জংশন। উভয় ক্রসিংই এখন সম্পূর্ণরুপ বন্ধ রয়েছে।

রাফাহ ক্রসিং কেন গুরুত্বপূর্ণ? : হামাস যোদ্ধারা গত ৭ অক্টোবর উত্তরের এরেজ ক্রসিং দিয়েই গাজা থেকে ইসরায়েলে প্রবেশ করে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালায়। হামলার পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত এরেজ ক্রসিং বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে গাজা থেকে সাধারণ বাসিন্দাদের বের হওয়া বা ভেতরে প্রবেশের জন্য একমাত্র পথ রাফাহ ক্রসিং। মানবিক ত্রাণ নিয়ে গাজা প্রবেশ করতে হলেও রাফাহ ক্রসিং দিয়েই আসতে হবে। গত সপ্তাহে মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, তারা গাজার জন্য ত্রাণ নিয়ে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলিকে উত্তরে সিনাইয়ের আলআরিশ বিমানবন্দরে অবতরণের নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও জ্বালানি ও মানবিক ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে কয়েক ডজন লরি গাজায় প্রবেশ করতে রাফাহ ক্রসিংয়ের কাছে অপেক্ষা করছে।

রাফাহ সীমান্তে কী চলছে? : হামাস যেদিন ইসরায়েলে হামলা চালায় সেদিন থেকেই গাজার পরিস্থিতি নিয়ে রাফাহ বর্ডার ক্রসিং এলাকায় নানা গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। রাফাহ ক্রসিং দিয়ে কারা পারাপার হবে তা হামাস এবং মিশর কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করলেও ইসরায়েল সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সক্ষম এবং তারা সেটা করেছেও। গত ৯ ও ১০ অক্টোবর ইসরায়েল তিনবার রাফাহ ক্রসিংয়ে হামলা চালিয়েছে।

যে হামলায় ফিলিস্তিন এবং মিশর উভয় দিকের কয়েকজন আহত হয়েছেন। যে কারণে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ ক্রসিংটি বন্ধ করে দিয়েছে। ১২ অক্টোবর মিশর সরকার ইসরায়েলকে রাফাহ বর্ডার ক্রসিংয়ের কাছে আকাশ হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানায়। যাতে গাজার সাধারণ মানুষদের জন্য তারা সাপোর্ট লাইফলাইন হিসেবে কাজ করতে পারে। মিশরের সরকার স্পষ্টভাবেই বলেছে, যদি ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করে তবে নিজেদের সীমান্তকর্মীদের নিরাপত্তার খাতিরে তারা রাফাহ ক্রসিং খুলবে না। তারা আগে হামলা বন্ধের নিশ্চয়তা চেয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোও বিদেশি পাসপোর্টধারীদের গাজা থেকে বের হয়ে যাওয়ার এবং সেখানে ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর জন্য রাফাহকে নিরাপদ রাখার নিশ্চয়তা পেতে চেষ্টা করছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানায় বিবিসি।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, গাজায় অবস্থান করা আমেরিকানদের রাফাহ ক্রসিংয়ের দিকে চলে যেতে বলা হয়েছে। বলেন, ক্রসিংটি খুলে দেওয়ার খবর সবাইকে সময়মত জানাতে পারা কঠিন হয়ে যাবে। এবং হয়তো খুব কম সময়ের জন্য সেটি খুলে দেয়া হবে। রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হবে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গাজার উত্তর থেকে লাখ লাখ মানুষ দক্ষিণের দিকে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সোমবার, যুদ্ধবিরতির চুক্তির পরে রাফাহ ক্রসিং সাময়িকভাবে খুলে দেওয়া হতে পারে এমন খবর প্রকাশের পর সেখানে যেন মানুষের ঢল নামেছে। তবে ইসরায়েল এবং হামাস উভয়ই দ্রুত সে খবর অস্বীকার করেছে।

কেন রাফাহ ক্রসিং বন্ধ রাখা হচ্ছে? : ইসরায়েল চাইছে হামাসের একজন সদস্যও যেনো গাজা ছাড়তে না পারে। সেই সঙ্গে তারা গাজার ভেতর প্রবেশ করা প্রতিটি লরি তল্লাশি করে এটা নিশ্চিত হয়ে চাইছে যে সেগুলোতে কোনো অস্ত্র বহন করা হচ্ছে না। এদিকে, মিশর অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুধুমাত্র বিদেশি ও দ্বৈত নাগরিকদের গাজা ছেড়ে যেতে এবং মানবিক ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে দিতে চায়। সবার জন্য সীমান্ত খুলে দিলে সিনাইয়ে ফিলিস্তিনিদের যে ঢল নামবে তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং খুব সম্ভব তারা সেটা চাইছে না।

ফিলিস্তিনিদের ভিড়ে চরমপন্থি জঙ্গিদের মিশরে প্রবেশ করা নিয়েও দেশটির সরকার উদ্বিগ্ন। ৭ অক্টোবরের আগেও গাজার ফিলিস্তিনিরা সহজে রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করতে পারতো না। এজন্য তাদের দুই থেকে চার সপ্তাহ আগে স্থানীয় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই নাম নিবন্ধন করাতে হতো এবং গাজা ছাড়ার কারণ উল্লেখ করতে হতো। তাদের সেই আবেদন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা মিশরীয় কর্তৃপক্ষ যে কারো দ্বারা নাকচ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকতো। জাতিসংঘের তথ্যমতে ২০২৩ সালের অগাস্ট পর্যন্ত মিশরীয় কর্তৃপক্ষ ১৯ হাজার ৬০৮ জন ফিলিস্তিনিকে সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি দেয়। বাতিল হয় ৩১৪ জনের আবেদন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএ পর্যন্ত ১১ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধইনস্টিটিউট অব কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্টে সেমিনার