জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শীর্ষপদে নিয়োগে ক্যাডার সার্ভিসগুলোর ‘চলমান বিভক্তি’ নিরসনে একটি নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করবে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। কমিটির প্রধান জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। এনবিআরের সঙ্কট নিরসনে ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানকে নিয়ে এই কমিটি করে দেয় মন্ত্রিপরষদ বিভাগ।
গত মে মাসে এনবিআরকে দুই ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করেছিল সরকার। সেই অধ্যাদেশে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক) ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা ও ক্ষমতা ‘খর্ব করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দুই ক্যাডারের পক্ষ থেকে সরকারের এই বিভাগটি ‘প্রশাসন ক্যাডারমুক্ত’ করার দাবিও জানানো হয়।
এনবিআর সংস্কারের এই উদ্যোগকে ঘিরে সেই থেকে বিভিন্ন ধাপে আন্দোলন চলতে থাকে। প্রথম অধ্যাদেশ জারি করার ১০ দিনের মাথায় গত ২২ মে অধ্যাদেশ ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে সরকার। কিন্তু তাতেও আন্দোলন থামেনি। এক পর্যায়ে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন এনবিআর কর্মকর্তার। সেই পরিস্থিতিতে এই উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করে সরকার। ইতোমধ্যে আন্দোলনে যুক্ত থাকা কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, অধ্যাদেশে কতগুলো সমস্যা কমিটি চিহ্নিত করেছে। আমরা একটা পরামর্শক কমিটি। আমরা এগুলো ঠিক করার পরামর্শ দেব। এনবিআরের আন্দোলন নিয়ে কমিটির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমে একটা নিরীহ আন্দোলন ছিল। পরে এটাকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করা হয়েছে। অর্থনীতির ক্ষতি করার উদ্দেশ্য এবং রাজস্ব আদায় বাধাগ্রস্ত করা এটার উদ্দেশ্য ছিল। তারা আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী একটা অবস্থান তৈরি করেছে। সরকার এই ক্ষেত্রে অপরিসীম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করতে চাই। নিপীড়নমূলক না হয়ে উনি এমনটা করেছেন।
সামনে কী? ফাওজুল কবির বলেন, অধ্যাদেশ সংশোধনের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেব। এনবিআর আর থাকবে না এবং এটা সবার জন্য ভালো। এনবিআরের নাম শুনলে মানুষ একটা লম্বা হাসি দেয়। এবং এই হাসির অর্থ আপনারা জানেন। এনবিআর না থাকাটাই সবার জন্য ভালো। দুইটা ডিভিশনের কথা বলা হয়েছে, এটা হবে। দুই ধরনের ক্যাডার থেকে যে দুই ধরনের দাবি, আমরা মনে করি কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধুমাত্র দুটি ক্যাডারের সদস্য নিয়ে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বিভাগ গঠিত হবে এর সঙ্গে আমরা একমত নই, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, একই সঙ্গে এই দুই প্রতিষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের খবরদারিও গ্রহণযোগ্য নয়। সবগুলো শুল্ক ও কাস্টমস ক্যাডার থেকে নেওয়া যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি প্রশাসন ক্যাডারের খবরদারিও গ্রহণযোগ্য নয়। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়ন নামের যে দুটা বিভাগ হবে, সেগুলোর সচিব কে হবেন, তা ঠিক করতে একটি নীতিমালা করার কথা বলেন ফাওজুল কবির।
তিনি বলেন, সেখানে বলা থাকবে যে, সচিবের এই এই যোগ্যতা থাকতে হবে। কারণ রাজস্ব কার্যক্রম তো চালাতে হবে। সেজন্য সচিব এবং ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে নিয়োগের জন্য একটা নীতিমালা করতে হবে। যাতে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমটা গতিশীল হয়। আমরা এই পর্যায়ে মাঠ পরিদর্শন করব। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আদিলুর রহমানও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।