চট্টগ্রাম কাস্টমসে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ধস হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে বৃহৎ এই সংস্থাটি। কাস্টমস কর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল আমদানি আগের তুলনায় কমে গেছে। এছাড়া উচ্চ শুল্কের অনেক পণ্যের আমদানিও আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। ফলে রাজস্ব আদায়ও কম হয়েছে। তবে আগের অর্থবছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং নভেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে আবারও নেতিবাচক ধারায় ফিরেছে তা। কাস্টমসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সামগ্রিক রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এত বড় ব্যবধান বিগত আর কোনো অর্থবছরে দেখা যায়নি ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে জুলাই থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৫৮৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে এই সময়ে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৯২৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত) মোট রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
কাস্টমস সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৯৮০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, আগস্টে ৫ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৪৫০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, অক্টোবরে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা, নভেম্বরে ৬ হাজার ৩৭ কোটি ১ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৪২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এছাড়া জানুয়ারিতে ৫ হাজার ৭০৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৯৪২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, মার্চে ৫ হাজার ৫৫৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, এপ্রিলে ৬ হাজার ৩২৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা, মে মাসে ৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং জুনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১৩১ কোটি ৪ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সেই নেতিবাচক প্রভাব চলতি ২০২০-২০২১ শুরুতেও অব্যাহত থাকে। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি পূরণ হয়নি। বর্তমানে উচ্চ শুল্কের অনেক খাতের পণ্য আমদানি কমে গেছে। আমরা আশা করি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমদানির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। যদিও এখন বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এই করোনার মধ্যেও আমরা কাস্টমসের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।